ফখরুল হোসেন চাকরি করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। পরিবার নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। শনিবার (১৫ জুন) গভীর রাতে সাতজনে মিলে কোরবানি দিতে ধুপখোলা পশুর হাট থেকে একটি গরু কেনেন। গরু কেনার পর পাঁচজনই আশেপাশের এটিএম বুথে ছুটেন টাকা তোলার জন্য। আশপাশের কয়েকটি এলাকায় গিয়েও তাদের কেউই টাকা তুলতে পারেননি। গভীর রাতে রিকশা নিয়ে দূরের এলাকাগুলোতে ছুটোছুটি করে দুইজন টাকা তুলতে পারলেও ফখরুক হোসেনসহ বাকি তিনজন তুলতে পারেননি। গরু কিনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের সবাইকে।
রাজধানীর টিকাটুলিতে বসবাস করেন ফরিদ আহমেদ। আজ রোববার (১৬ জুন) সকালে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গুরুতর অসুস্থ নিকটাত্মীয়কে দেখতে যান মোহাম্মদপুর এলাকায়। চারটি এটিএম বুথে গিয়েও তিনি টাকা তুলতে পারেননি। স্ত্রীকে নিয়ে মারাত্মক বিড়ম্বনায় শিকার হন তিনি।
এমন পরিস্থির মুখে শুধু ফখরুল হোসেন কিংবা ফরিদ আহমদেই পড়েননি, আরও শত শত গ্রাহককে টাকার জন্য বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তুলতে না পারার দুর্ভোগের বিবরণ দিয়ে ফখরুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জীবনে এমন দুর্ভোগের মধ্যে আর কখনো পড়েছি বলে মনে নেই। সাত শরিক মিলে আমরা কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়ে হাটে গুরু কিনতে গিয়েছিলাম। দুইজন ক্যাশ টাকা সঙ্গে নিয়েছিলেন। আমরা পাঁচজন গরু কেনার পর পার্শ্ববর্তী এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু গরু কেনার পর গভীর রাতে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বিভিন্ন এলাকার বুথে গিয়েও কেউই টাকা তুলতে পারিনি।’
গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ এটিএম বুথেই ‘এই বুথে টাকা নেই’ পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। কোথাও কোথাও পোস্টার না থাকলেও এটিএম বুথগুলোতে টাকা নেই বলে গ্রাহকদের জানিয়ে দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। গ্রাহক ব্যাংকে তার গচ্ছিত অর্থ অটোমেটেড টেলার মেশিন বা অটোমেটিক টেলার মেশিনের (এটিএম) মাধ্যমে তুলতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো সময় এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সুযোগ থাকায় গ্রাহকরা ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে বুথগুলোতেই যাচ্ছেন টাকা তুলতে। তবে এবারের কোরবানির ছুটিতে টাকা তুলতে গিয়ে সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান গ্রাহকরা।
নাসির উদ্দিন (ছদ্ম নাম) একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ক্যাশ ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। এটিএম বুথে টাকা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই সাতটি এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তুলতে পারিনি। পরে নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করেছি।’
এটিএম বুথে ক্যাশ সংকটের জন্য চারটি কারণ উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের আগে গ্রাহকরা যে পরিমাণ নগদ টাকা তুলেছেন তার বিপরীতে জমা হয়েছে খুবই কম। সবগুলো ব্যাংকেই নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে ঈদের আগে থেকেই। ফলে এটিএম বুথের জন্য যে পরিমান টাকা গচ্ছিত রাখার দরকার ছিল তা যোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এটিএম বুথের জন্য যে টাকা রেখেছিলাম তা দিয়ে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচদিন চলার কথা ছিল। কিন্তু গ্রাহকরা ব্যাংকে নগদ টাকা তুলতে না পেরে আগেই বুথ থেকে টাকা তুলে ফেলেছেন। ফলে দুইদিনের মধ্যেই এটিএম বুথগুলো খালি হয়ে গেছে।’
নিজের ব্যাংকের উদাহরণ দিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো থেকে ৩৫টি ব্যাংকের গ্রাহক টাকা তুলতে পারেন। ঈদের ছুটির আগেই অনেক ব্যাংকের অসংখ্য শাখা গ্রাহকদের টাকা দিতে পারেনি। ফলে ওইসব ব্যাংকের গ্রাহকরাও আমাদের ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলেছেন। এছাড়াও একজন গ্রাহক আগে একদিনে (২৪ ঘন্টায়) ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারতেন। এখন এ পরিমাণ এক লাখ টাকা করা হয়েছে। এ কারণেও এটিএম বুথগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়েছে।’
একুশে সংবাদ/এ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :