দেশে চাহিদার চেয়ে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬.৪ শতাংশ বেশি। তবে এই সক্ষমতা দেশের অর্থনীতির মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, উৎপাদন না করলেও দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয় ক্যাপাসিটি চার্জ। এই চার্জের নামে এখন হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে সরকারের তহবিল থেকে। রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্রাক ইন সেন্টারে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ আয়োজন করে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ব্যবহার করা না গেলেও কেন উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে? তিনি আরও বলেন, সরকার এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করেছে তা ২০৩০ সালেও প্রয়োজন হবে না। আজ থেকে ৬ বছরে চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২৫ শতাংশ রিজার্ভ ধরলে তখন ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা হলেই হয়। আবার সক্ষমতা বাড়লেও দেশে লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে গড়ে ১১শ’ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। বাজেটে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত নিয়ে স্পষ্ট কিছুই নেই। সরকার এই খাত নিয়ে কী করবে তা নিয়েও সবাই অন্ধকারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ এমপি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাসের কথা বলে দাম বাড়ানো হলো, কিন্তু লোডশেডিং কমেনি। ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ডিজেল দিয়ে, সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস এনে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ না থাকায় বিনিয়োগ আসছে না জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ ক্যাপিটল মেশিনারিজ আমদানি কমেছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২২ শতাংশ। বাজেটের অধিকাংশ ব্যয় অনুন্নয়ন খাতে।
পাশের দেশ ভারতের বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে তিনিবলেন, তাদের জমি, বিদ্যুৎ, জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়া হয়, ৫ বছরের জন্য কর্মীদের বেতন দেয় সরকার। বিনিয়োগ তো ওই দেশেই হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না হলে কর্মসংস্থান বাড়ানো যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা নিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট পার হয়েছে। কাজ করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি হবে, তা সংশোধন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এ সংসদ সদস্য।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশে সুবিধা মিলছে না ডলারের দাম বেশি হওয়ায়। এর প্রভাব বিদ্যুৎ খাতেও পড়ছে। অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, সবার আগে একটি আধুনিক জ্বালানি নীতিমালা প্রয়োজন। তা না করে জোড়াতালি দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য একের পর এক মাস্টার প্ল্যান ফেল করছে। বিদ্যুৎ খাতের বিশেষ বিধান বাতিল করতে হবে। টেন্ডার ছাড়া প্রকল্প নেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও ১২ থেকে ১৩ টাকায় সৌর বিদ্যুতের চুক্তি হচ্ছে। অথচ দর প্রক্রিয়ায় গেলে এটি ৮ থেকে ৯ টাকায় করা সম্ভব।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নামে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সমন্বয় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎ কিনছে। আবার কমিশনকে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে। কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ, ঘুষের টাকা, কমিশন সবই জনগণের টাকা থেকে মেটানো হচ্ছে। এরপরও জনগণকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এই বাজেট এলেই কী, আর গেলেই কী। বরং বাজেটে যত বেশি বরাদ্দ বাড়বে তত বেশি লুট হবে।
একুশে সংবাদ/স/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :