AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই, ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কৃষিজমিতে নির্মিত হচ্ছে ঘরবাড়ি : হুমকির মুখে কৃষি-অর্থনীতি


কৃষিজমিতে নির্মিত হচ্ছে ঘরবাড়ি : হুমকির মুখে কৃষি-অর্থনীতি

‘আমার দাদা ইসমাইল হোসেনের ৪ ছেলে। ৪ ছেলে বিয়ে করার পর তারা যৌথ পরিবার ভেঙে আলাদা হয়ে যান। তারা পৈত্রিক কৃষি জমি ও ফলদ বাগানে ৪টি আলাদা বাড়ি করেন। ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের ছেলেরা আবার বিয়ে করার পর আলাদা হয়ে ৫টি আলাদা বাড়ি করেন কৃষিজমিতে, কেউবা পুরনো পুকুর ভরাট করে। এভাবেই আমাদের দাদার আমলের যৌথ কৃষি জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি।’ এরকম কথা বলেন উজিরপুর উপজেলার হস্তিশুন্ড গ্রামের মো. শাহ আলম।

এরকম কেবল বরিশালের উজিরপুর নয়-বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিদিন চলছে কৃষিজমি, বনভূমি, পাহাড় কেটে, পুকুর ভরাট করে নতুন বাড়ি নির্মাণ। কোথাও কোথাও হচ্ছে কারখানা, ইটভাটা, নতুন নতুন হাটবাজার। সব এলাকায় যেন চলছে নির্মাণযজ্ঞ।
হস্তিশুন্ড গ্রামের ওই পরিবারটিতে সরেজমিনে দেখা গেছে- তাদের এখন কৃষি জমি নেই বললেই হয়। অন্য দিকে তাদের বাড়িগুলো প্রায়ই নির্মিত হয়েছে ইট দিয়ে অর্থাৎ পাকা বাড়ি। এর ফলে একদিকে কৃষি জমি নষ্ট, অন্য দিকে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে।

জনসংখ্যা বাড়ার ফলে বাড়ছে আবাসন সংকট। এ সংকট নিরসনে মানুষ নির্বিচারে ফসলি জমি, পুকুর, পাহাড় কেটে, বনভূমিতে নির্মাণ করছে বাড়িঘর, কারখানাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার ফলে হুমকির মুখে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি। যদিও বাংলাদেশ এখনো কৃষিনির্ভর একটি দেশ। এখনো আমাদের জাতীয় আয়ের এক বিশাল অংশ এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিমাণ নির্ভর এই কৃষি খাতের উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। প্রতি বছর ২৩ থেকে ২৫ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। ধান-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উপযোগী উর্বর মাটির দেশ। দেশে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। জিডিপিতে এখনো কৃষির অবদান ৪ শতাংশ। কৃষিতে দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।

এদিকে শুধু মেগা সিটিগুলো নয়-জেলা-উপজেলা সদরসংলগ্ন এলাকায় ডেভেলপার কোম্পানি ফসলি জমি ভরাট করে প্লট বিক্রি করছে। কোথাও কোথাও এসব কোম্পানি পাহাড়, বন কেটেও একরের পর একর জমিতে বাড়ি নির্মাণ করছে। আর এ ভাবে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি।

কৃষি উৎপাদনের ওপর দেশের অর্থনীতির ভালো-মন্দ নির্ধারিত হয়ে থাকে। অথচ জলবায়ুর প্রভাবে নদীভাঙন, লবণাক্ততা, নগরায়ণ, ইটভাটা, শিল্প-কারখানা, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও যত্রতত্র বসতি প্রতিষ্ঠার কারণে সারা দেশে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিদিন ২ শতাংশ কৃষিজমি অনাবাদি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর বা ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। মোট জনসংখ্যা ১৮ কোটি হিসেবে, মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় শূন্য দশমিক ৪৪ হেক্টরে। ঘরবাড়ি, সড়ক নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতি বছর দেশের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। দেশের খোরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও কৃষিজমির পরিমাণ যে হারে কমছে, তাতে অচিরেই কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কৃষিজমি ভরাটের ফলে প্রতিদিন মোট কৃষিজমি কমছে ৯৬ বিঘা। তামাক চাষের কারণে প্রতিদিন ৯ হাজার একর কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্যশস্যের দাম ২০৪০ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়বে। এতে গরিব মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০৫০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বাড়ছে, কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এতে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ‍‍`বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা‍‍` শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর ৬৯ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ কাজের কারণে প্রতি বছর ৩ হাজার হেক্টর জমি হারিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহারনীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে কৃষিজমি কৃষিকাজ ছাড়া অন্যকোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্যকোনো অকৃষি স্থাপনা করছে মানুষ। ঝুলে আছে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন। ভূমি ও কৃষিজমি রক্ষায় রাষ্ট্রের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা নেই। যা বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, প্রতি বছর দেশের কৃষি জমির পরিমাণ কমছে ৬৮ হাজার ৭০০ হেক্টর, অর্থাৎ প্রতি বছর শতকরা এক ভাগ হিসাবে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাছে। বর্তমান হারে ভূমি অবক্ষয় চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোনো কৃষিজমি থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভূমির মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এখন ৭৯ দশমিক ৪৬ লাখ হেক্টর। এর ৫৩ শতাংশ-ই দুই বা তিন ফসলি জমি। অবকাঠামো নির্মাণ, ইটভাটা, কল-কারখানার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করায় দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি কাজে চলে যাচ্ছে। অথচ জাতীয় ভূমি ব্যবহারনীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে, কৃষিজমি কৃষিকাজ ছাড়া অন্যকোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।


বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোনো কৃষিজমি থাকবে না। জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়লেও কৃষিজমি বাড়ছে না। ১৯৮২-৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রকৃত ফসলি জমি ছিল ৯.১৫ মিলিয়ন হেক্টর। ২০১৭-১৮ সালে ফসলি জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮.০২ মিলিয়ন হেক্টরে।

ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের তথ্য মতে ১৯৭১ সালে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১ হেক্টর, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬ হেক্টর, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১ হেক্টর, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমি প্রতি বছর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতি বছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে পরিণত হচ্ছে। 

আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে কৃষিই মানুষের মূল জীবিকা। মানুষ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়িঘরও বাড়ছে, বাড়ছে কলকারখানা বা অন্যান্য অনুষঙ্গও। কিন্তু সেই বাড়তি মানুষের খাদ্য আসবে কোথা থেকে? জমি তো কমছে। ভাগ্যিস বর্তমান সরকারের কৃষির ওপর অধিক নজরদারির কারণেই কম জমিতেও অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। আর এ সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। বাড়তি মানুষের জন্য বাড়তি ফসল উৎপাদনের ফলেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

কৃষিজমি কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। মানুষ যেখানে-সেখানে বসতবাড়ি ঘরে তুলছে। সড়ক ও জনপদ নির্মাণে বহুলাংশেই কৃষিজমি ব্যবহার হচ্ছে। শিল্প-কারখানা ব্যাপকভাবে কৃষিজমি ব্যবহার করছে। দেশ যতই শিল্পোন্নত হচ্ছে ততোই কৃষিতে আবাদযোগ্য জমিতে শিল্প-কারখানা হচ্ছে।

দেশের তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে ধানের মোট উৎপাদনের প্রায় ১৭ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন ৬১ শতাংশ কমে যাবে। ধানের উৎপাদন ২০৫০ সালের মধ্যে ২০০২ সালের তুলনায় ৪.৫ মিলিয়ন টন কমতে পারে। কৃষির ভিতরের অবস্থা এখন কেমন সেই কথা আমরা কেউই স্মরণে আনি না। কৃষক এবং তার আবাদযোগ্য জমি পেছনের খবর নিয়ে আমাদের কারও কোনো মাথাব্যথা দেখা যায় না। সরকার নিয়মমাফিক কৃষি খাতে উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জোরেসোরে প্রচার করলেও কাজের কাজ যে কিছুই হচ্ছে না তার প্রমাণ নিচের কিছু পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। পরিসংখ্যান সহজেই বলে দিতে পারছে বাংলাদেশের কৃষক কত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য কীভাবে খাদ্যোৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে কৃষিজমি হারিয়ে যাওয়া অন্যদিকে জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতি এই দুই বৈপরত্যের মধ্যে থেকেও দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার অসামান্য কাজটি করে চলেছেন আমাদের কৃষক ভাইয়েরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে চলছে জমির ব্যবহার। যেখানে-সেখানে হচ্ছে বাড়ি। নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার দোকানসহ বিভিন্ন রকমের স্থাপনা। হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। গ্রামের কৃষিজমি দ্রম্নত অকৃষি খাতে যাচ্ছে। সংরক্ষিত ভূমি বলতে কিছু নেই। তবে জলাধার, বন রক্ষায় আইন ও নীতিমালা থাকলে সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন জমি কমার মূল কারণ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্য চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে। তাছাড়া বাণিজ্যিক কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৯৬ বিঘা বা ৬৯২ একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। রূপান্তরিত জমির পুরোটাই অকৃষি খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জলাশয় ভরাট করে প্রতিদিন মোট কৃষিজমি কমছে ৯৬ বিঘা। তামাক চাষের কারণে প্রতিদিন নয় হাজার একর কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ বছরে মোট ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। বাংলাদেশের মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। বছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এক হাজার হেক্টর জমি। ৮০ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্মাণ কাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি। গেল ৫০ বছরে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার একর জমিতে।

ফসলের জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হাসনাত জাহান খান বলেন, সরকারি অনুমতি ছাড়া কোন জমি শ্রেণি পরিবর্তন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি কৃষি জমির মাটি কাটতে হলে অথবা ভরাট করতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে। তাই কৃষি জমিতে আবাসন প্রকল্প করা যাবে না। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

উপজেলা প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, আবাসন প্রকল্পের হাত থেকে কৃষি জমিকে রক্ষা করতে হলে, গ্রামাঞ্চলে পরিকল্পিত বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করে যৌথ পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ শওকত আলী বলেন, কৃষি জমি ভরাট করে গৃহ নির্মাণ বন্ধ করতে হলে, সর্বপ্রথম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সেবাসমূহ শেষে, যেমন- নরমাল ডেলিভারি, সিজারিয়ান অথবা টিকাদান কর্মসূচির সময়, মায়েদেরকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন জন্ম বিরতিকরণ ব্যবস্থা, স্থায়ী পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। যাতে দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হয়।

একুশে সংবাদ/ এসএডি
 

Link copied!