বাড়তি রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সরকারী এমপিদের নামে আমদানি করা ৪২টি পাজেরো গাড়ির নিলাম না করে, বরং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনবিআর আশা করছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রায় ৪শ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হতে পারে। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, অতিরিক্ত শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার কারণে গাড়িগুলো বিক্রি হতে সমস্যায় পড়তে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডে ৫ মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যদের নামে আনা শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়িগুলো এখন ছাড় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর সংসদ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ায় এসব গাড়ি ছাড় করতে সমস্যা তৈরি হয়। আইন অনুসারে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে গাড়িগুলো ছাড় না হওয়ায়, ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের বিভিন্ন চিঠির পর, অবশেষে আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাড়িগুলো ছাড় করার সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। প্রতিটি গাড়ির শুল্ক বাবদ সাড়ে আট কোটি টাকা পরিশোধের পর, আমদানিকারকদের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে গাড়িগুলো ডেলিভারি নেওয়ার চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এনবিআরের তথ্যে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যদের নামে আনা মোট ৫১টি গাড়ির আমদানি মূল্য প্রায় ৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারের আমদানি মূল্য ছিল ৯৮ লাখ টাকার কিছু কম, যার শুল্ক পরিশোধ করলে মোট দাম দাঁড়াবে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। এই গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬.৬ শতাংশ, এবং ৩৩৪৬ সিসির গাড়ি হিসেবে সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমদানিকারকরা যদি শুল্ক পরিশোধ করে, তাহলে গাড়িগুলো ছাড় করা হবে। অন্যথায়, গাড়িগুলো নিলামে তোলা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর চায় যে জায়গাটি শিগগিরই খালি করা হোক, এবং তা হোক নিলামের মাধ্যমে অথবা আমদানিকারকরা শুল্ক পরিশোধ করে গাড়িগুলো ছাড় করিয়ে নিয়ে যাক।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সহ-সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, এই ধরনের উচ্চমূল্যের গাড়িগুলো ছাড় করানো সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমদানিকারকদের কাছ থেকে চিঠির মাধ্যমে ছাড়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত এবং অতিদ্রুত নিলামের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উল্লেখযোগ্য, গত বছর ৪২টি গাড়ি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বন্দরে আটকা পড়েছিল, তবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং ব্যারিস্টার সুমনসহ ৭ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য গত জুলাই মাসে গাড়ি ছাড় করে নিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে আইন প্রণেতাদের খুশি করার উদ্দেশ্যে শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা চালু করা হয়েছিল।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :