ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ মন্তব্য করেছেন, বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বর্তমানে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ কমে ৭.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে কমেছে, যা বেশ উদ্বেগজনক।
শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত "বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা" শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তাসকীন আহমেদ।
২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ডিসেম্বর নাগাদ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন।
তিনি বলেন, স্মুথ অপারেশন নিশ্চিত করার জন্য শিল্পের সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি প্রয়োজন। এছাড়াও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ- উৎপাদন, ব্যবসা পরিচালনা এবং স্মুথ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন এবং ঋণের সুদ হার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য।
শেষের দুই মাস মূল্যস্ফীতি কমলেও বাজারে তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপণ্যের ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান বলেন, আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ হিসাব মেলাতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আট বছর আগে নেয়া অটোমেশন ও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প এখনও সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রহিম খান বলেন, লজিস্টিক পলিসি ও বাণিজ্য সহায়তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় ১০-১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ও অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে বিগত দিনগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় হতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নেয়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, রিজার্ভ সংকটের কারণে কাঁচামালের আমদানি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বিধি-নিষেধের ফলে আমাদের সাপ্লাই চেইনে স্বল্পতা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং চলতি বছরের মধ্যে রিজার্ভ ২৫-২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলে শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি স্বল্পতা কেটে যাবে।
রিজার্ভ বাড়াতে শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন মন্তব্য করে মাসরুর রিয়াজ বলেন, এর সঙ্গে শিল্প-কারখানার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার। তাতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
একুশে সংবাদ/ব.জ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :