AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আজ থেকে কার্যকর ট্রাম্পের নতুন শুল্কারোপ, তীব্র হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১:২৮ পিএম, ৯ এপ্রিল, ২০২৫
আজ থেকে কার্যকর ট্রাম্পের নতুন শুল্কারোপ, তীব্র হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন বর্ধিত শুল্ক ব্যবস্থা ৯ এপ্রিল (বুধবার) মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১০৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন বলছে, শাস্তিমূলক শুল্কের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা বাণিজ্যের নিয়মকে উপড়ে ফেলেছেন ট্রাম্প। এ সিদ্ধান্ত সামনে মন্দার আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী স্টকগুলো তীব্রভাবে নিম্নমুখী হয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প শুল্ক উন্মোচন করার পর থেকে এসএন্ডপি ৫০০ প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্য হ্রাস করেছে যা ১৯৫০-এর দশকে বেঞ্চমার্ক তৈরির পর থেকে অন্যতম বড় ক্ষতি। এটি সূচক হিসেবে নেমে গেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

জাপানের নিকেই (এন২২৫) বুধবার এশিয়ান বাজার জুড়ে ৩% এরও বেশি নিচে নেমেছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ১৬ বছরেরও বেশি নিচে চলে গেছে। মার্কিন স্টক ফিউচারগুলোও ওয়াল স্ট্রিটে টানা পঞ্চম দিনে লোকসান দেখছে।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে হোয়াইট হাউসের একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, আমাদের কাছে অনেক দেশ আসছে যারা চুক্তি করতে চায়। তিনি পরে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি আশা করেছিলেন যে চীনও একটি চুক্তি অনুসরণ করবে।

ইতোমধ্যে ট্রাম্পের প্রশাসন দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান এই দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন আগামী সপ্তাহে।

গত সপ্তাহে বেইজিংয়ের ঘোষণা করা পাল্টা শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প চীনা আমদানির ওপর প্রায় দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছেন। চীন বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার পাল্টা পদক্ষেপকে ব্ল্যাকমেইল মনে করে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে শীর্ষ চীনা ব্রোকারেজগুলো অভ্যন্তরীণ শেয়ারের দামে সহায়তা করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ফলে বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশ দুটির মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে এর তীব্র প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাজারেও। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ক্ষেত্রে সরবরাহকারী দেশ হিসেবে তৃতীয় বৃহত্তম ছিল চীন।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে মার্কিন ভোক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর ক্ষেত্রে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হতে পারে।তারা বলছেন, বুধবারের শুল্কের সম্পূর্ণ প্রভাব কিছু সময়ের জন্য অনুভূত নাও হতে পারে। কারণ মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রানজিটে থাকা পণ্য আগামী ২৭ মে’র মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো পর্যন্ত নতুন শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাবে।

এদিকে রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আমেরিকান আশা করছেন, আগামী ছয় মাসে দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।

গত সপ্তাহের বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করে ট্রাম্প দেশটিতে প্রবেশ করা শত শত কোটি ডলারের পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এ ছাড়া চীন বাদে যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘সবচেয়ে খারাপ’ বলে বিবেচনা করেছেন, সেসব দেশের ওপর তিনি চাপিয়েছেন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের বোঝ।

এই তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে অনেকগুলো দেশও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্রাম্পের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে "ছিঁড়ে ফেলা" দেশগুলোর লক্ষ্য ছিল। তিনি ও তার মিত্ররা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থাগুলো প্রয়োজনীয়, যা তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করে।

কিন্তু একটি বড় ধাক্কার সম্ভাবনা রয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই ট্রিলিয়নের বেশি মূল্যের আমদানিকে নতুন এই শুল্কারোপ প্রভাবিত করবে যা যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিক কার্যকর শুল্কের হারকে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ে সর্বোচ্চ স্তরে ঠেলে দেবে।

এ ছাড়া দেশটিতে পোশাকের মূল্য আনুমানিক ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধিসহ প্রধান ভোগ্যপণ্যের বিপুল মূল্যবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে। বিশ্লেষকরা আমেরিকায় বিক্রি হ্রাস, বাণিজ্য সংকুচিত এবং বিদেশে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করছেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

নতুন শুল্ক নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে আঘাত হানবে।

এ ছাড়া বেড়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের কাছে দাম বেশি হলে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে। তখন সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে শুল্ক আরোপের কারণে শুধু বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা বেড়ে গেছে, এই কারণে তাদের জিডিপি কমে যাবে বলে বিবিসিকে বলেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ’একদিকে তাদের আয় কমবে, অন্যদিকে দাম বাড়বে। মার্কিন ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে। এর একটি প্রভাব বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই পড়বে।’ ইউরোপেও চাহিদা কমে যাবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাকই রপ্তানি হয়েছে ৭৪০ কোটি ডলারের। এর বাইরে ব্যাগ, প্লাস্টিক, জুতা, কৃষিপণ্যও বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের সিংহভাগ জায়গা দখল করে আছে তৈরি পোশাক খাত। ফলে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় এর প্রভাব বেশি পড়বে পোশাক খাতে।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরাও পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসেন সস্তা শ্রম ও মূল্যের জন্য। ব্র্যান্ডগুলো বেশি টাকায় পণ্য বিক্রি করতে কখনোই চাইবেন না। সুতরাং, বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দাম বেড়ে গেলে মার্কিন বায়াররা বিকল্প খুঁজবে।

এক্ষেত্রে, তাদের জন্য সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে কেনিয়া, মিশর কিংবা হন্ডুরাসের মতো দেশ। কারণ ওই দেশগুলোতে শুল্কের হার ১০ শতাংশ এবং ওগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাছেও। এতে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে রপ্তানির বাজার ইউরোপের দিকে ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি বিবিসি বাংলা

Link copied!