প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার মতো বাতিল করা হতে পারে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষাও। মূলত শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড আর কোচিং নির্ভর পড়াশুনা বন্ধ করে, যুগোপযোগী শিক্ষা এবং প্রতিদিন ক্লাসেই মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সচিবালয়ে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুসারে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রথম এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। যা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রথাগত পরীক্ষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত তিন বছর ধরে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। আগামী দিনেও এ পরীক্ষা হচ্ছে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও না নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
পিইসি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, দীর্ঘ ১৩ বছর পর গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হয়ে পড়ে। তাদের কোচিং নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষাও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ফরিদ আহম্মদ।
তিনি জানান, প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার পর থেকেই তৃণমূল থেকে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছিল। এমনকি অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়। তবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালু থাকলে কোচিং ব্যবসা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভরতা বাড়তে পারে বলেই এই পরীক্ষা বাতিলে একটি মহল থেকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আরও জানান, মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বসবে। এতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, অর্থ মন্ত্রণালয়, ব্যানবেইসসহ প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চূড়ান্ত করা হবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কিনা।
সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখার পক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুসারে, পিইসি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের পরে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখার পক্ষে নয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সবশেষ বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া হয় ২০০৮ সালে। এরপর ২০০৯ সালে পিইসি পরীক্ষা চালু করা হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হতো। এরপর পিইসি পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণার ১৩ বছর পর গতবার আবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল।
মূলত পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় যারা ২৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেত তারাই এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :