শিক্ষার উৎকর্ষতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাও অপরিহার্য বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশব্যাপী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বছরব্যাপী এই কার্যক্রম চলবে। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠুক। সমৃদ্ধ ও সৃন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলুক।’
১৭ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমীক্ষা ও মতবিনিময়’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।
দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়ন করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এসবের পাশাপাশি নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করছে। তবে প্রতিবন্ধকতা যতই থাকুক না কেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে গভীর উৎসাহ থাকে, উদ্দীপনা থাকে, স্বপ্ন জয়ের আকাক্সক্ষা থাকে। কিন্তু কখনো সেই পথে সে বিমর্ষ হয়, বিষণ্ন হয়। কখনো সে মনে করে তার স্বপ্নের জায়গাটায় পৌঁছাতে না পারায় অনেকগুলো বাধা আছে। শিক্ষক হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে আমি মনে করি- এটি আমাদের পবিত্র দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন এমন সময় না আসে সেজন্য তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। এক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় আমাদের করণীয় আছে সেটি নির্ধারণ করা।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা ভীষণ আত্মবিশ্বাসী এবং উদ্যোমী। এই আত্মবিশ্বাসের অনেক কারণ আছে। আমরা এই অঞ্চলের মানুষ আত্মনির্ভরশীল সেটি যেমন আছে। আমরা যেই স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রে বসবাস করি যেখানে আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মত্যাগ রয়েছে। আমাদের ভালো থাকার জন্য তাঁরা জীবন দিয়েছেন। সেজন্য আমাদের আত্মবিশ্বাসের এবং গৌরবের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সেকারণেই আমাদের শিক্ষকদের মনোবল সারাজীবনের জন্য দৃঢ় থাকা উচিত। এটি ভেবেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য করেছি। পাশাপাশি বিশ্বনাগরিক হিসেবে তৈরির জন্য তাদের সামনে হাজির করেছি আইসিটি, সফটস্কিল এবং অন্ট্রাপ্রেনারশিপের মতো বিষয়গুলো। এগুলো শিখলে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘এসব কিছুর পরেও আমার কাছে মনে হয়েছে কোথাও একটা অপূর্ণতা রয়েছে। কেননা মানুষ হিসেবে একেবারে ভালো থাকার মধ্যেও একধরনের অশান্ত অবস্থা, মানসিক বিপণ্নতা, হতাশা থাকতে পারে। ধনবান এবং সমৃদ্ধ মানুষের মধ্যেও এটি হতে পারে। সেকারণেই মনে হয়েছে আমার প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যটি ভালো রাখবার জন্য তাকে ছাত্র জীবন থেকে তৈরি করতে পারলে সে আগামী দিনে গোটা সমাজকে এই বিপণ্ন এবং বিষণ্নতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। এটির সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। আমরা মানসিক স্বাস্থ্যকে সুন্দর রাখার মধ্য দিয়ে গোটা দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারব। এটি মৌলিক একটি বিষয়। সেই ভাবনা থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মানসিক স্বাস্থ্য এবং ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা শিক্ষকের সঙ্গে গভীর নৈকট্য ও বন্ধুত্ব তৈরি করবে। পিতা-মাতাকে যেমন ভালোবাস তেমনি দেশমাতৃকাকেও ভালোবাসবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল সকল কর্মকাণ্ড তাদের দক্ষতা দিয়ে এগিয়ে যাক। এটি ভাবনার কোনো কারণ নেই যে, তুমি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাক বলে তোমার আত্মবিশ্বাস থাকবে না। তুমি এই হাওড় এলাকায় থেকেও বিশ্বজয় করতে পারবে। তোমার সামনে একজন আবদুল হামিদের দৃষ্টান্ত আছে, যিনি এই হাওড়ের সন্তান হয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।’
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক আহমদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মনোবিজ্ঞানী ড. তাবাসসুম আমিনা। এছাড়া অন্যদের মধ্যে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী মারুফ হোসেন মিশুক, মো. আরিফুল ইসলাম আবির, নুসরাত জাহান, শামান্তা ইসলাম প্রমুখ। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :