সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বিসিএস পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছেন নারী শিক্ষার্থীরা। কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে নারী শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ হওয়ার হার কমছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব একেবারে হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া অনেক জেলা থেকে ধারাবাহিক বিভিন্ন ক্যাডারে একজনও উত্তীর্ণ হননি। ছয়টি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ ও ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারে নারী পরীক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে কয়েক দিন ধরে সারাদেশে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোটা পদ্ধতি বিদ্যমান থাকাকালে ৩৬তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ শতাংশ নারী। ওই বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণদের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ নারী। পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৩৪ শতাংশ পুরুষ ও ৬৬ শতাংশ নারী। ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারে ৯৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী উত্তীর্ণ হন।
কোটা পদ্ধতি থাকাকালে ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ৭১ দশমিক ৩৪ শতাংশ পুরুষ ও ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ নারী উত্তীর্ণ হয়েছেন। পুলিশে এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ নারী। পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৭৫ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ শতাংশ নারী। ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারে ৮৮ দশমিক ৫২ শতাংশ পুরুষ ও ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ নারী উত্তীর্ণ হন। এ ছাড়া ৩৮তম বিসিএসে কোটা পদ্ধতি থাকাকালে প্রশাসন ক্যাডারে ৬৯ দশমিক ৭০ শতাংশ পুরুষ ও ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ নারী উত্তীর্ণ হন। পুলিশ ক্যাডারে ৮৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ পুরুষ ও ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ নারী। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৮৯ দশমিক ২৯ শতাংশ পুরুষ ও ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী।
কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ার পর ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণদের মধ্যে ৭৭ দশমিক ১৪ শতাংশ পুরুষ ও ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ নারী। যেখানে ৩৬তম বিসিএসে ৩৬ শতাংশ নারী প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলের পর ৪০তম বিসিএসে তা ২২ শতাংশে নেমে আসে। ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণদের মধ্যে ৮৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ পুরুষ ও ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ নারী। ওই বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারের মাত্র ৮ শতাংশ নারী, বাকি ৯২ শতাংশ পুরুষ।
কোটা পদ্ধতি বহাল থাকার সময় ধারাবাহিকভাবে পররাষ্ট্র ক্যাডারে নারীরা ভালো করে আসছিলেন। ৪০তম বিসিএসে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারে ৯৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী। এ ছাড়া কোটা বাতিল হওয়ার পর ৪১তম বিসিএসেও নারীরা পিছিয়ে গেছেন। ওই পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের ৭৪ শতাংশ পুরুষ, নারী ২৬ শতাংশ। পুলিশ ক্যাডারে নারীরা সবচেয়ে খারাপ করেছেন ওই বিসিএসে। মাত্র ৪ শতাংশ নারী উত্তীর্ণ হন। বাকি ৯৬ শতাংশ পুরুষ। পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৮৭ শতাংশ ৫০ শতাংশ পুরুষ ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নারী। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ পুরুষ ও ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী বিসিএসে মেধা তালিকায় আসেন।
৪৩তম বিসিএসেও নারীরা এগিয়ে আসতে পারেননি। কোটা বাতিল থাকার কারণে তারা মেধা তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেননি। ওই পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে ৮১ শতাংশ নারী ও ১৯ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। পুলিশ ক্যাডারে ৯১ শতাংশ পুরুষ ও ৯ শতাংশ নারী। পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৯২ শতাংশ পুরুষ ও ৮ শতাংশ নারী। এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারে ৯৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ পুরুষ ও ৩ দশমিক ২১ শতাংশ নারী। ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ৫৮টি জেলা থেকে একজন নারীও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মাত্র চারজন নারী উত্তীর্ণ হন। ৬০ জেলা থেকে একজনও নেই। ৪৩তম পুলিশ ক্যাডারে ৫৭টি জেলা থেকে কোনো নারী প্রার্থী মেধাতালিকায় নেই। সাত জেলার ৯ জন নারী উত্তীর্ণ হন।
কোটা বাতিলের পর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিসিএসের মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া কষ্টসাধ্য হচ্ছে। কোটা থাকাকালে ৩৬তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১২ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। ৩৭তম বিসিএসে ওই জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন ৮ জন। ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩২ জন। এটি সব ক্যাডার থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। কোটা বাতিলের পর ৪০তম বিসিএসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাত্র একজন, ৪১তম বিসিএসে একজন ও ৪৩তম বিসিএসে দু’জন উত্তীর্ণ হন।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :