এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরিচালনার লক্ষ্যে সরকার একাধিক কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে।
আগামী ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, শিক্ষা বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষাসংক্রান্ত একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র প্রকাশ করেছে।
শনিবার (২২ মার্চ) ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ পরিপত্রে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি, ফটোকপি মেশিন বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষার সময়সীমায় টানা ৩৪ দিন দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্দেশনাসমূহ:
১। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত আসন গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর কেন্দ্রে আসে, তবে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও দেরির কারণ রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
২। প্রতিদিন দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা কেন্দ্রসচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর কোনো পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৩। কেন্দ্রসচিব ব্যতীত অন্য কেউ পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন, স্মার্টঘড়ি, কলম বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহন করতে পারবেন না। কেন্দ্রসচিব কেবল ছবি তোলা ও ইন্টারনেট সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ নিষিদ্ধ ডিভাইস ব্যবহার করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৪। প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, শিক্ষক বা কর্মচারীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া, কালো কাচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এ ধরনের কোনো যানবাহন প্রশ্ন পরিবহনে ব্যবহার করা যাবে না।
৫। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হবে। ট্রেজারি, থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রসচিব বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তায় প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও বহন করবেন।
৬। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে সব সেটের প্রশ্নপত্র নেওয়া হবে। নির্ধারিত সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে ঘোষণা করা হবে এবং সেই সেট অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
৭। পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত অন্য কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। অনুমোদন ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৮। কোনো অনিবার্য কারণে পরীক্ষার সময় পিছিয়ে গেলে, বিলম্বের সময় অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।
৯। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরীক্ষা কেন্দ্র ও প্রশ্নপত্র পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
১০। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১১। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত গুজব ছড়ানো বা এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদার করা হবে।
১২। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের আশপাশে সব ধরনের ফটোকপি মেশিন বন্ধ থাকবে।
১৩। ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত দেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
১৪। প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র দ্রুততম সময়ে ডাক বিভাগের মাধ্যমে বোর্ডে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৫। পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় পরীক্ষা চলাকালীন ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।
১৬। পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে উপস্থাপনের দায়িত্ব আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যানের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
এই নির্দেশনাগুলোর মূল লক্ষ্য পরীক্ষাকে স্বচ্ছ, সুশৃঙ্খল ও নকলমুক্ত পরিবেশে সম্পন্ন করা।
একুশে সংবাদ// আ. ট// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :