ছোট ও বড় পর্দার একজন গুণী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। কখনো ফিরে যান শৈশবে, কৈশোরে আবার কখনো তারুণ্যে। শারদীয় দুর্গাপূজায়ও তিনি ফিরে গেলেন তার শৈশব-কৈশোরে। স্মৃতিচারণায় ডুবে গেলেন বাবাকে নিয়ে।
অভিনেতা চঞ্চল তার বাবার কথা বলতে গিয়ে লেখেন, বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম-প্রথম যে বছর আমি দুর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবির ঘ্রাণটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিল বাবা? শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেওয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবিতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়? যে ঘ্রাণ এখনো আমার নাকে, মুখে, সারা শরীরে লেপ্টে আছে!
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, একমাত্র পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজে সঙ্গে করে শার্টের মাপ দেয়ার জন্য নিয়ে যেতো দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম, কাপড় কাটা হলো কিনা, শেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখবার জন্য। এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয় স্বজন অনেককেই পূজার সময় নতুন পোশাক কিনে দেই সাধ্যমতো। এখন আমার ঘর ভর্তি কত কত নতুন পোশাক! পোশাকগুলো পরার সময়ও পাই না ঠিকমত।
এবারও নিজে হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার লিস্ট তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে! বাবা তো নেই! চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা-মাকে ছাড়া কোনো দুর্গাপূজা পালন করিনি। এবারই প্রথম বাবা নেই। বাবার জন্য কিছু কেনাও হয়নি।
স্মৃতিকারত চঞ্চল আরও লেখেন, সেই আমার বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরিতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ঐরকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেকো। যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা। এবার পূজাতেও হয়তো বাড়িতে গেলে গাড়ির হর্ন শুনে, গেটের বাইরে এসে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, রাস্তায় কোনো কষ্ট হয়নি তো বাবা? সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। মা দুর্গা সকলের মঙ্গল করুন।
একুশে সংবাদ/ম.হ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :