কিছুদিন আগেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের থিয়েটার ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের ওপর যৌন নিগ্রহের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল। বাংলা নাটকের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই তখন এ ব্যাপারে কথা বলেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর মধ্যে আলোচনায় টালিপাড়ার অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলি। শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ অভিনেত্রী।
টালি ইন্ডাস্ট্রির এই অভিনেত্রী সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, আমি আজ প্রায় ৬ বছর আগের একটি খুব ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পোস্ট মনে করছি। এতে লেখা ছিল- আমি হয়তো তরুণ ছিলাম। কিন্তু ভুলে যাইনি, #MeToo. দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কান্না, শিশু নির্যাতনের নীরব শিকার।
তিনি লিখেছেন, একজন যে তার বেড়ে উঠার বছরগুলোয় চুপ থেকেছে। কারণ, সে প্রকাশ্যে সত্য বলতে পারেনি। অপরাধীকে স্বাভাবিকভাবে শাস্তি দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি আজ বিশ্বাস করতে চাই যে, কর্মফল সে ভোগ করবেই। আর আমি এখনো তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, এটা সে করতে পারে। আমাকে যে ট্রমার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে, সারা জীবনের ক্ষত, যা সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। এর জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। তার নাম নিতে পারব না এই কারণে যে, সে হয়তো ভালো আছে। আর এটাই তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীর কাছ থেকে সুবিধা নিতে সুযোগ দিয়েছে। যে তার সরলতার কারণে ওই সময় পৃথিবীকে পুরোপুরি চিনতে পারেনি।
এ টালি অভিনেত্রী লিখেছেন, আজকের এই পোস্টটি আমার স্বাক্ষর হতে দিন। কেবল থিয়েটারে নিরাপদ স্থানের জন্য না, বরং সমাজে বড় আকারে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানের জন্য। সম্ভব হলে আপনার গল্প শেয়ার করুন, যখন পারেন। এতে এ ধরনের গুরুতর অপব্যবহারগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আর এটি নিরসনের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপও। আমার নিজের সঙ্গে ঘটনা আজ শেয়ার করে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছি আমি। আমার কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ।
কিশোর বেলার সেই ঘটনা অবশ্য এখনো ভোলেননি চূর্ণী। অপরাধীর ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। সেই অপরাধী এখনো সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে তিনি লিখেছেন, আমার কাছে মনে হয় তার যৌনবিকৃত স্বভাব পরিবর্তন হয়েছে। তার অঙ্গভঙ্গি ও ভালোমানুষির অভিনয় এখনো ক্ষুব্ধ করে আমাকে। আর এই পোস্ট সেই নির্যাতনকারীর কাছে পৌঁছাবে, বিশ্বাস আমার। মানুষরূপী সেই পশু অবশ্যই বুঝবে, আমি ছোট থাকতে পারি, কিন্তু কিছুই ভুলিনি।
এ অভিনেত্রী জানান, পরিচালক ও অভিনেতা তার স্বামী কৌশিক গাঙ্গুলির কাছে কিছুই গোপন রাখেননি। দীর্ঘদিন পর হলেও সমাজের সামনে এমন কঠিন সত্য প্রকাশের জন্য স্ত্রীর সাহসিকতাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন কৌশিক।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :