লজ্জা নারীর ভূষণ, ভদ্র ঘরের মেয়েরা রাত ৯টার পর বাড়ি থেকে বের হয় না- এমন কথা শুনতে হয়েছে, শুনতে হয়। কেন? এই প্রশ্ন তুললেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। তিনি জানতে চান, কেন কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষের জন্য মেয়েরা সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে না? কেন বুক ঢাকতে হবে ব্যাগে?
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল গোটা ভারত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন হচ্ছে আরও তীব্র। বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে। রাতে মেয়েদের কাজ করা নিয়ে জোর চর্চা।
সেই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়েই অভিনেত্রী বলেন, আমাদের ছোটবেলায় ছিল, মেয়েরা রাত ৯টার পর বাড়ির বাইরে থাকবে না। কাকারা বলতেন, ভদ্র ঘরের মেয়েরা নাকি রাত ৯টার পর বাইরে থাকে না। সেটা তাদের চিন্তাধারা ছিল। পুজার সময়ও বাড়িতে রাত ৯টার মধ্যে ফিরতে হবে এটা বাড়ির নিয়ম ছিল, মানসিকতা ছিল। সেই মানসিকতা কেন ছিল? নিশ্চয়ই সুরক্ষার অভাব থেকে ছিল! হয়তো সেরকম সুরক্ষা ছিল না, সেরকম ঘটনা ঘটত, আর সেজন্যই হয়তো বলতেন- রাত ৯টার পর তুমি যদি বাইরে থাকো তোমার সম্মান বজায় থাকবে না। এটা একটা সময় ছিল। কিন্তু এখন তো ধারা পালটেছে। এখন তো রাতেই কাজ। যেমন আমাদের পেশায়।’
অভিনেত্রীর কথায়, ‘রাতের শুটিং তো দিনে করা যাবে না, সেটা তো রাতেই করতে হবে। মেডিক্যাল থেকে শুরু করে কর্পোরেট, রাতে ডিউটি তো অনেকের মাস্ট। আমার নাচের স্কুলের মেয়েদেরও অনেকের রাতের শিফট থাকে। সুতরাং, আমাকে যদি রাতে কাজ করতে না দেওয়া হয় তার মানে আমার নিরাপত্তার অভাব আছে। যেখানে এটা বলা হচ্ছে সেই রাজ্যে, সেই শহরে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। সেটাকে আমাদের লড়াই করেই ঠিক করতে হবে।’
সকল ভদ্রতার দায় কি মেয়েদের উপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়? প্রশ্ন শুনেই অভিনেত্রী বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, চিরকাল তাই-ই। যে ধর্ষিত হয়েছে তারই লজ্জা, যে ধর্ষণ করেছে তার কোনও লজ্জা নেই। এখনও অনেক লোক বলে, সে ওখানে গিয়েছিল কেন? এরকম জামা পরেছিল কেন? এসব কথা হয়। এগুলো মানুষের বিকৃত মানসিকতা। যারা এই ধরনের মানসিকতা পোষণ করে যে ধর্ষিতা হয়েছে সে খারাপ, তারাই নিজেরা ধর্ষক। এটা ঘূণ ধরা একটা মানসিকতা। আজকে এই যে এত ঘটনা ঘটছে, এটা কেন হচ্ছে? এটা তো মানুষের বিকৃত রুচির পরিচয়। আজকে যে দেশে এত ধর্ষণ, এত ঘটনা…এগুলো বিকৃত মানসিকতার পরিচয়।’
অভিনেত্রীর প্রশ্ন, ‘আর এই যে প্রশাসন নিয়ে এত কথা, প্রশাসনে যে মেয়েরা কাজ করে তারা সুরক্ষিত? এটা বিকৃত মেন্টালিটির মানুষের পরিচয় এবং তাদের কিছু করা যাচ্ছে না সেটা ব্যর্থতা। এটাকে আন্দোলন করে বন্ধ করতে হবে। নিয়ম আনতেই হবে। কিছু করার নেই। আমার পরের প্রজন্ম কেন সুন্দরভাবে বাঁচবে না? সমাজের কিছু বিকৃত মানসিকতার জন্য আমি আমার বাকি জীবনটা কেন সুন্দরভাবে বাঁচব না? তাদেরও কেন বুকে ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে? তাদের কেন কেউ গায়ে হাত দিলে বাড়ির লোক বলবে ওরকম হয় ছেড়ে দাও, ভুলে যাও…তারাই বা কেন বাসে-ট্রামে উঠলে হেনস্তার শিকার হবে?’
অপরাজিতা বলেন, ‘আমরা কোনও মেয়ে বলতে পারব না আমাকে মলেস্ট করা হয়নি। যদি কেউ বলে তার মানে সে জীবনে কোনওদিন বাড়ি থেকেই বের হয়নি বা তার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। এই ঘটনা তো ঘটেই থাকে আমাদের সঙ্গে। আমি কেন আমার সমাজে সুস্থভাবে বাঁচব না? আমার গায়ে হাত তুললে আমি কেন তার হাতটা ভেঙে দিতে পারব না? আমাকে কেন বলা হবে ঠিক আছে ভুলে যাও বা সাবধানে থাকো। এই কথাটা আমরা কেন শুনব? কিছু বিকৃত রুচির মানুষের জন্য কেন আমাদের এটা শুনতে হবে যে তোমরা সাবধানে থাকো। তারা সাবধানে থাকুক। তারা নিজেদের বদলে ফেলুক। তাদের কাউন্সিলিং হোক, তাদের ডাক্তার দেখানো হোক, তারা মেন্টাল হাসপাতালে যাক। আমরা কেন করব?’
একুশে সংবাদ/ঢ.প./সাএ
আপনার মতামত লিখুন :