দেশের আলোচিত র্যাপ গায়ক মাহমুদ হাসান তাবিব। কামরাঙ্গীরচরে বেড়ে ওঠা পথশিশু রানাকে নিয়ে তিনি গেয়েছিলেন ‘গল্লি বয়’। ২০১৯ সালে ভাইরাল হওয়া এই গানের পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গানের কথায় তাবিব বরাবরই তুলে ধরেছেন সমাজের নানান অসংগতি। তবে তার পরিবারকেই অবিচারের মুখে পড়তে হয়েছে বলে ফেসবুকে জানালেন এ গায়ক।
ফেসবুক পোস্টে তাবিব বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আপেল, বশিরসহ আরও কিছু নেতা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিজ কক্ষে বন্দি করে। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষকের থেকে জোরপূর্বক সাইন নিয়ে তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করে ও পরে চাকরিচ্যুত করে। সেদিন এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন নজরুল ইসলাম চঞ্চল স্যার যাকে তখনই অমানবিক নির্যাতন করা হয়। চঞ্চল স্যার আজ পৃথিবীতে নেই। জুলুমের শিকার হওয়া এই চাকরিচ্যুত অধ্যক্ষ আমার পিতা জনাব মুহাম্মদ ফজলুর রহমান।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ‘ওরা তোমার আব্বুকে বন্দি করেছে। তাকে তুলে নিয়ে যাবে। তুমি কিছু করো।’ আমি ঢাবির কলা ভবনের চতুর্থ তলায় আরবি বিভাগের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের আর্তনাদ শুনছিলাম আর দেখছিলাম অপরাজেয় বাংলার সামনে দিয়ে শোডাউন যাচ্ছে—জয় বাংলা।’
ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে এই গায়ক আরও লিখেছেন, ‘চোখের কোনে এক ফোটা পানি। আজও আমার পিতা চাকরিচ্যুত। যদি আমার পিতার মতো হাজার হাজার নির্যাতিত শিক্ষক এখন ন্যায়বিচার না পায়, তবে আমি বিদ্রোহ করব। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শতশত শহীদ রক্তে আগুন জ্বালিয়েছে। ইনসাফ চাই, ন্যায়বিচার।’
বিষয়টির বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলে তাবিব বলেন, ‘২০১৮ সালে বাবাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে গিয়েছিলাম। আর চলতি বছরে আগের সরকারের আমলে ডিসি অফিসের মাধ্যমে বাবাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।’
তার বিষয়ে কী অভিযোগ আনা হয়েছিল, জানতে চাইলে তাবিব বলেন, ‘যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেগুলোর কয়েকটি বেশ হাস্যকর। যেমন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বই লোপাট করার মতো অভিযোগ। আবার গুরুতর একটি অভিযোগ করা হয় সেটা হলো, আমার বাবার সার্টিফিকেট নাকি জাল! বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অথচ, আমার বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। ১৯৮৩-৮৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১১৭তম হয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ইসলামিক স্টাডিজে মাইগ্রেশন করে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন।
ইংরেজি, আরবি, বাংলা, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানের প্রতি আমার পিতার এই উদ্যমের জন্য সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার পিতাকে সুস্থ করার জন্য ফ্রান্স থেকে একটি বিশেষ মেডিকেল টিমের সহায়তার ব্যবস্থা করে। এই মেডিকেল টিম ব্যর্থ হয়। তাই বাবা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ বিষয়ে বহু প্রমাণ যেমন আছে, তেমনি বাবার সার্টিফিকেটও আছে। এ বিভাগে তার বেশ সুনাম ছিল। যারা বাবার বিষয়ে অভিযোগ এনেছিলেন, তারা শুধু কিছু অজুহাত দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। এমনকি এ বিষয়ে আদালতের রায়ও আমাদের পক্ষে ছিল।’
একুশে সংবাদ/এসএস
আপনার মতামত লিখুন :