কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর ‘বাংলার মায়াভরা পথে’ হাঁটবেন না। শোনাবেন না ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই’-এর মতো মন ছুঁয়ে যাওয়া কোনো গানও। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বর্ষীয়ান এই শিল্পীর মৃত্যু হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি২৪ ঘণ্টা, দৈনিক খবর প্রতিদিনসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। তার বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন শিক্ষক। দেশভাগের পর তার পরিবার চুঁচুড়ায় বসবাস শুরু করে। শৈশব থেকেই কবিতায় সুর বসানোর প্রতি ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের `আমি ধান কাটার গান গাই` কবিতার মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু করেন তিনি। যদিও তিনি কোনো প্রথাগত সংগীত শিক্ষা নেননি, তবু নিজের আবেগ ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে সুর ও কথার মেলবন্ধন গড়ে তুলেছিলেন।
সংগীত জগতে তার প্রবেশ ঘটে ১৯৮৮ সালে ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ অ্যালবামের মাধ্যমে, যা একক নয় বরং অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে সম্মিলিত প্রয়াস ছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘যেতে হবে’। ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’, যেখানে সংকলিত ছিল তার অপ্রকাশিত গানগুলো।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্টি বাংলা গানের ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ হয়ে থাকবে। ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাংলা ও বাঙালির আবেগের প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’-এর মতো বহু গান শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় নিজের গানে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখার পক্ষে ছিলেন। তার কণ্ঠের অনন্য আবেগময়তা এবং সুরেলা পরিবেশনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখত। তাঁর প্রয়াণ বাংলা সংগীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি, তবে তাঁর গান চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :