দুনিয়া মাতানো ক্যাপ্টেন আমেরিকা এবার আসছে বাংলাদেশ। ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পেয়েছে সিরিজের নতুন ছবি ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। মুক্তির আগে থেকেই আলোচনার ঝড় তোলা ছবিটি মুক্তির পর বক্স অফিস মাতিয়ে চলেছে। এবার বাংলাদেশের ভক্তরাও নড়েচড়ে বসতে পারেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে চলেছে কাঙ্খিত এই ছবি। একই দিনে আরও একটি ছবি মুক্তি দিচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। সেটি হলো, আলোচিত জাপানি অ্যানিমেশন ছবি ‘মাই হিরো একাডেমিয়া: ইউ আর নেক্সট’। জনপ্রিয় মাই হিরো একাডেমিয়া সিরিজের দ্বিতীয় ফিচার ফিল্ম এটি।
২০২৫ সালের প্রথম সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে পর্দায় এসেছে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ৩৫তম সিনেমা এটি। স্টিভ রজার্সের অবসরের পর ক্যাপ্টেন আমেরিকার দায়িত্ব পেয়েছেন স্যাম উইলসন। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নতুন জেগে ওঠা ‘তিয়ামুত’ দ্বীপের আধিপত্য নিয়ে বিশ্বরাজনীতির চাপে কীভাবে ক্যাপ্টেন আমেরিকার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন স্যাম? সেই প্রশ্নের উত্তর থাকবে এই সিনেমায়। এই সিনেমায় প্রথমবারের মতো দেখা যাবে রেড হাল্ককে। এর আগে রেড হাল্কের অল্টার ইগো থান্ডারবোল্ট রসকে দেখা গেছে এমসিইউতে। অভিনেতা উইলিয়াম হার্টের মৃত্যুতে সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’খ্যাত অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ড। জুলিয়াস ওনাহ পরিচালিত এই সিনেমার গল্প শুরু হবে দ্য ফ্যালকন অ্যান্ড দ্য উইন্টার সোলজার সিরিজের পর থেকে। সেখানে স্যাম উইলসন স্টিভ রজার্সের দেওয়া ঢালটি গ্রহণ করেন। সেই সিরিজের সফলতা দেখে আশা করা হচ্ছে, সিনেমাটি তার ফ্যানবেজের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন পাবে। বিশ্বব্যাপী ভক্তরা এই সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছেন। বিশেষ করে নতুন ক্যাপ্টেন আমেরিকার ভূমিকায় অ্যান্থনি ম্যাকির অভিনয় এবং হ্যারিসন ফোর্ডের রেড হাল্ক চরিত্র নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। বক্স অফিসে দারুণ সূচনা করেছে ছবিটি। ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং প্রেসিডেন্টস ডে উইকএন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে এই ছবি, যা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে সিনেমাটি ৯২.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১৯২.৪ মিলিয়ন ডলারে। সিনেমাটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টস ডে ছুটির দিনে অন্যতম সেরা ওপেনিংয়ে নাম লিখিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় ওপেনার হিসেবেও শীর্ষে পৌঁছালো ছবিটি। একই সময়ে মুক্তি পাওয়া আরও কিছু সিনেমার বক্স অফিস খবর অনুযায়ী সবার শীর্ষে আছে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। রটেন টমেটোজে ছবিটির অডিয়েন্স স্কোর ৮০%। ছবিতে ক্যাপ্টেন আমেরিকা বা স্যাম উইলসনের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন অ্যান্টনি ম্যাকি। হ্যারিসন ফোর্ড প্রেসিডেন্ট থ্যাডিয়াস ‘থান্ডারবোল্ট’ রসের চরিত্রে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ছবিটি কৃষ্ণাঙ্গ দর্শকদের মধ্যে বেশি আগ্রহ তৈরি করেছে বলে দাবি করছে হলিউড রিপোর্টার। আর পুরুষ ও নারী দর্শকদের মধ্যে ৬২% পুরুষ এবং ৪৮% মহিলা সিনেমাটি উপভোগ করছেন। প্রেসিডেন্টস ডে উইকএন্ডে সর্বোচ্চ আয়ের ইতিহাসে মার্ভেল স্টুডিওসের সুনাম রয়েছে। ২০১৮ সালের তাদের ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ আয় করেছিল ২৪২.১ মিলিয়ন ডলার, ‘ডেডপুল’ ১৫২.১ মিলিয়ন এবং ‘অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াস্প: কুয়ান্টামেনিয়া’ সিনেমাটি ১২০.৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। এর মধ্যে ‘বø্যাক প্যান্থার’ সিনেমাটি ৩ দিনে ২০২ মিলিয়ন আয় করেছিল। ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ ছবিও সেই পথে হাঁটার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পূর্বাভাসে সিনেমাটির কাস্ট পরিবর্তন এবং পুরো ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন রূপের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আসন্ন এই কিস্তি ২০১৪ সালের ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: উইন্টার সোলজার’ সিনেমার মতো বাস্তববাদী গল্পে নির্মিত। সেই ছবিটি ৯৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। ট্র্যাকিং সার্ভিস কুয়েরাম জানায়, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ এই মাসে মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ অর্জন করেছে। যার স্কোর ৫৮। এটি ইউনিভার্সালের উলফ ম্যান (৪৪), লাইন্সগেটের ফ্লাইট রিস্ক (৩৭) এবং সনি স্টুডিওর প্যাডিংটন ইন পেরু (৩৬) সিনেমাগুলোর চেয়ে বেশি।

অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় জাপান পৃথিবীকে কম কিছু দেয়নি। ওসামু তেজুকা তো কেবল শুরু! এরপর হায়াও মিয়াঝাকি, ইসাও তাকাহাতা, কাতসুহিরো ওতমো- এমন আরো কত নামই রয়ে গেছে বাকি। হালের আরেকটি জনপ্রিয় ছবি ‘মাই হিরো একাডেমিয়া ম্যাঙ্গা’। এ যাবৎ মুক্তি পাওয়া এই সিরিজের দু’টি ছবি জাপানে দারুণ সাড়া পেয়েছে। মন জিতে নিয়েছে জাপানের বাইরের বিভিন্ন দেশের দর্শকদেরও। এবার এসেছে আরেকটি ছবি ‘মাই হিরো একাডেমিয়া: ইউ আর নেক্সট’, যা জনপ্রিয় মাই হিরো একাডেমিয়া সিরিজের দ্বিতীয় ফিচার ফিল্ম। এটি কোহেই হোরিকোশির তৈরি মাঙ্গা সিরিজের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। অ্যাকশন ফ্যান্টাসি ঘরানার এই সিনেমা পরিচালনা করেছেন টেনসাই ওকামুরা।
এ ছবিতে দেখা যাবে, ছাত্রছাত্রীদের একটি গ্রুপকে নতুন একটি দ্বীপে প্রশিক্ষণ এবং সেবার জন্য পাঠানো হয়। তাদের কাজ হলো দ্বীপবাসীদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলো সমাধান করা। তবে শান্তিপূর্ণ এই দ্বীপে হঠাৎ আক্রমণ করে শক্তিশালী ভিলেন নাইন এবং তার দল। তাদের লক্ষ্য হলো এক বিশেষ কোয়ার্ক দখল করা, যা তাদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি প্রদান করবে। ছাত্ররা, বিশেষত ইজুকু মিডোরিয়া (ডেকু) এবং কাতসুকি বাকুগো, নিজেদের ক্ষমতা ও টিমওয়ার্ক দিয়ে ভিলেনদের মোকাবিলা করে। ডেকু এবং বাকুগোর সম্পর্ক ও তাদের টিমওয়ার্ক গল্পের মূল আকর্ষণ। ছবির অ্যানিমেশন অসাধারণ, যা স্টুডিও বোনসের বিশেষত্ব। এর অ্যাকশন দৃশ্য এবং আবেগঘন মুহূর্তগুলো দর্শকদের মুগ্ধ করবে। হিরো এবং ভিলেনদের লড়াইয়ের মাধ্যমে সাহস, আত্মত্যাগ এবং বন্ধুত্বের মূল্য বোঝানো হয়েছে। সিনেমাটি সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছে এবং বক্স অফিসেও ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। সবমিলিয়ে এটি ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচিত। আপনি যদি মাই হিরো একাডেমিয়া সিরিজের ভক্ত হন, তাহলে এটি অবশ্যই দেখার মতো। এই সিনেমাটি হিরো এবং ভিলেনের লড়াইয়ের পাশাপাশি গভীর আবেগ এবং বন্ধুত্বের গল্প তুলে ধরে। সিনেমাটির একটি বড় শক্তি হলো চরিত্রগুলোর মানবিক দিক। বিশেষ করে মিডোরিয়া এবং বাকুগোর মধ্যকার বন্ধুত্ব ও প্রতিদ্ব›দ্বীতার মুহূর্তগুলো দর্শকদের হৃদয়ে প্রভাব ফেলেছে। মাই হিরো একাডেমিয়া অ্যানিমে সিরিজটি বিশ্বজুড়ে বড় একটি ফ্যানবেস তৈরি করেছে। ছবিটি মুক্তির পর এই ফ্যানবেসের উচ্ছ¡াস সিনেমাটিকে বক্স অফিসে আরও এগিয়ে দিয়েছে। সিনেমাটি সমালোচকদের কাছ থেকে উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে, বিশেষত এর দৃষ্টিনন্দন ভিজুয়্যাল, শক্তিশালী বার্তা এবং উত্তেজনাপূর্ণ গল্প বলার জন্য। আপনি যদি সুপারহিরো অ্যানিমে পছন্দ করেন, তাহলে "মাই হিরো একাডেমিয়া: ইউ আর নেক্সট" দেখা অবশ্যই একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :