AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্ধ করতে হবে পাহাড় ও বন উজাড়


Ekushey Sangbad
হৃদয় দেবনাথ
১২:৪৭ পিএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্ধ করতে হবে পাহাড় ও বন উজাড়

পাহাড় পৃথিবীর অন্যতম রক্ষাকবচ।অন্যভাবে বলতে গেলে পাহাড়কে বলা হয় পৃথিবীর পেরেক। পেরেক মেরে যেমন কিছু আটকে রাখা যায়, তেমনি পাহাড়ও পৃথিবীর উপরিস্থলের প্লেটগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখে। মাটির ওপরে পাহাড়ের দৃশ্যমান অংশ ছাড়া মাটির নিচে রয়েছে বিস্তৃত আরেক অংশ অনেকটা ফ্রাস্টাম অব কোনোর মতো। এই অংশ পাহাড়ের স্থায়িত্ব ও ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্য বজায়ে বিরাট ভূমিকা রাখে। এমনকি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় রেখে চলে বিশেষ ভূমিকা। অথচ, আজ চারদিকে পরিবেশ বিধ্বংসী নানান কর্মকাণ্ডের মধ্যে পাহাড় কাটা বিশেষ আলোচনায় আসছে। পাহাড়কে কেটে ফেললে বা পাহাড় উপরিস্থিত বৃক্ষের বিনাশ পাহাড়ের রক্ষাকবচের ভূমিকাকে অকেজো করে দেয়। 

একসময় পাহাড় নিজেই দুর্বল হয়ে ধসে পড়ে।নদনদী, গাছপালার মতোই পাহাড় পরিবেশ-প্রতিবেশের এক বিশেষ অনুষঙ্গ, যার বিনাশ পৃথিবীকে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঠেলে দেয়। বর্ষা মৌসুম এলেই দেশে পাহাড় কাটার ধুম পড়ে যায়। বাংলাদেশের পাহাড় অঞ্চল চট্টগ্রাম সিলেটের ও মৌলভীবাজারে পাহাড় কাটার মহোৎসবের খবর প্রায় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে যেমন এলাকার নান্দনিকতা নষ্ট হচ্ছে তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্য পড়েছে হুমকির মুখে। এমনকি পাহাড়ধসে মানুষের মৃত্যু এক চরম বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সিলেট ও মৌলভীবাজারে অঞ্চলে পাহাড় কাটার ধুম লেগেছে যেন। এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, রাজধানী ঢাকার বড় বড় শিল্পপতিরা পাহাড় দখল করে বাগান বিলাস কেউবা আবার রিসোর্ট হোটেল,মোটেলসহ বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্ব। এভাবে চট্টগ্রাম সিলেট ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বেশকটি সরকারি পাহাড়ের এখন দখলদারদের দখলে। পরিবেশ অধিদফতর মাঝে মধ্যে কাউকে কাউকে জরিমানা করলেও , কিন্তু তাতে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। জরিমানা দিয়ে অনেকে পুনরায় পাহাড় কাটছে এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে অনেক। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জরিমানা দেয়া মানে পাহাড় কাটার বৈধতা পাওয়া। পরিবেশ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের কথা হলো, অভিযান যদি পরিচালনা করা হয়ই, তাহলে পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না কেন? দ্বিতীয় কথা, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা যারা পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আদতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই সিলেট মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। গত ২৮ আগস্ট শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের লাখাইছড়া চা-বাগানে পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে হিরা ভূমিজ (৩৩), রিনা ভূমিজ (২২), রাধা মাহালী (৪৫) ও পূর্ণিমা ভূমিজ (২২)। একই পরিবারের চারজন নারী সদস্য নিহত হয়েছেন। পাহাড় ধসে নিহতের ঘটনা এ অঞ্চলে নতুন নয়। এর আগেও এ অঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তবুও থেমে নেই পাহাড় কাটা।পর্যটননগরী হওয়ায় একশ্রেণির প্রভাবশালী লোকের নির্দেশে রিসোর্ট হোটেল-মোটেল নির্মাণের নামে পাহাড় কাটা এ অঞ্চলে এখন প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

মাননীয় সরকার প্রধানের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই তালিকায় মৌলভীবাজার জেলাও রয়েছে। মৌলভীবাজার এবং শ্রীমঙ্গলে গৃহহীনদেরআবাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে যে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে পাহাড় এবং প্রকৃতি প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পাহাড় কেটে ও পাহাড়ের গাছপালা কেটে আশ্রয়হীনদের জন্য নির্মিত বাড়িঘর এখন বসবাসকারীদের জন্য অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।আশ্রয়হীনদের বাড়ি ঘরে যেকোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে। এদিকে পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালা মাটির অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে সহজে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে প্রতিবারই প্রাণ হারায় মানুষ। বস্তুত কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। 

গত এক দশকে চট্টগ্রাম সিলেট মৌলভীবাজারে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৩৫টি পাহাড়। সেইসঙ্গে অন্তত ১৫৬টি পাহাড় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০০৭ সালের মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ নির্ণয় করে ৩৬ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল; কিন্তু সেগুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি। 

এ ছাড়াও মৌলভীবাজারে গেল পাঁচ বছরে পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক। মনে রাখা দরকার, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক না হলে আমাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে সেই দায় শোধ করতে হয়। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের সুরক্ষায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এমনটাই প্রত্যাশা।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!