AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

১১১ দখলদারের কবজায় সিলেটের নদ-নদী


Ekushey Sangbad
হৃদয় দেবনাথ
০৫:৩৪ পিএম, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
১১১ দখলদারের কবজায় সিলেটের নদ-নদী

অবৈধভাবে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, শিল্প-কারখানার দূষণ, পলি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সিলেট বিভাগের ৩১টি নদী আজ সংকটাপন্ন। এর মধ্যে সিলেটের প্রধানতম দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাও রয়েছে। সম্প্রতি ‘সিলেট বিভাগীয় নদীবিষয়ক কর্মশালা’য় এ তথ্য উঠে আসে। সম্প্রতি শহরতলির খাদিমনগরের একটি রিসোর্টে যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ প‌রিবেশ আইন‌বিদ স‌মি‌তি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) ও পা‌নি অধিকার ফোরাম।

কর্মশালায় জানানো হয়, নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ ২০২৩ সালের হিসাবমতে, দেশে ১ হাজার ৮টি নদ-নদী রয়েছে। সিলেট বিভাগে রয়েছে ১৬৮টি। এর মধ্যে সিলেটে ৩৫টি, সুনামগঞ্জে ৯৭টি, মৌলভীবাজারে আটটি ও হবিগঞ্জে ২৮টি। যদিও আলোচকদের দাবি, সরকারি এ তথ্যে গরমিল রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের অনেক নদ-নদী এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। সিলেটেও এমন বেশ কয়েকটি নদী তালিকায় রয়েছে কিন্তু অস্তিত্ব নেই।

এছাড়া বেশকিছু নদীর তীর ১ হাজার ১৯৪ জন দখল করে রেখেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, ডাউকি, পিয়াইন, ধলাই, লোভা, সারি, বাসিয়া ও চেঙ্গেরখাল নদী বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। সুনামগঞ্জের ধোপজান, যাদুকাটা, নলজুর, বৌলাই, রক্তি, চেলা, খাশিয়ামারা, কুশিউড়া, মাহরাম, মহাসিং ও বোকা নদী অস্তিত্ব হারানোর পথে। মৌলভীবাজারের ধলাই, মনু, জুড়ী, কণ্ঠীনালা ও গোপলা নদী এবং হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই, সুতাং, সোনাই, বরাক, কাষ্টি ও করাঙ্গী নদীরও আজ বিপন্ন অবস্থা। মূলত নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ; অবৈধভাবে বালি-পাথর উত্তোলন ও দূষণ; অপরিকল্পিত বাঁধ, সেতু ও স্লু্ইস গেট নির্মাণ; খালের সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা; নদীগর্ভে পলির অবক্ষেপণ ও পলির অব্যবস্থাপনার কারণে নদীগুলোর অবস্থা এমন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।

সিলেটের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, যাদুকাটা, মনুসহ বিভিন্ন নদী, খাল, পাহাড়ি ছড়া দখলে-দূষণ-ভরাটে অস্তিত্ব হরাচ্ছে। নদীর তীর জুড়ে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। কোথাও কোথাও তীর দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। তাছাড়া পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে শুরু হয়েছে নদীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া। খোদ বিভাগীয় সিলেট নগরীর পাশে সুরমা নদীর তীরে দেওয়াল নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার মাছের কতিপয় আড়তদার।স্থাপনা। তাছাড়া পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে শুরু হয়েছে নদীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া। খোদ বিভাগীয় সিলেট নগরীর পাশে সুরমা নদীর তীরে দেওয়াল নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার মাছের কতিপয় আড়তদার।

সুরমা:
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় সুরমা নদীর ৪৫০ মিটার জায়গা ২৩ জন দখলদারের কবলে। তারা নদীতীরবর্তী স্থানে ৭২টি স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। অবশ্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, উচ্ছেদ হওয়া স্থান ফের দখলে নিয়ে নিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া কানাইঘাট বাজারে সুরমা নদীর ২৫০ মিটার দখল করে রেখেছেন স্থানীয় ছয় দখলদার। সেখানে ২৩টি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন তারা। অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ি এলাকায় সুরমা নদীর ৩০০ মিটার দখলদারদের হাতে। একই উপজেলার গাছবাড়ি এলাকায় সুরমার ৩০০ মিটার দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ২৫ জন নদীখেকো।

কুশিয়ারা:
সিলেটের বালাগঞ্জে এ নদীটির ২৫০ জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ২০টি স্থাপনা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় ২০ জন নদীখেকো। এ ছাড়া এই উপজেলায় শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ও কুশিয়ারা পাওয়ার প্ল্যান্ট নদীটির ১০ মিটার জায়গায় তাদের স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে রেখেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারবাজার এলাকায় কুশিয়ারা ৩০০ মিটার তীরে ২০টি স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে রেখেছেন স্থানীয় চন্দরপুর এলাকার ১৭ জন দখলবাজ। ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার ৯০০ মিটার তীরে ৩৫টি পাকা, আধা পাকা ও টিনশেডের ঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

গোয়াইন:
এ ছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলায় গোয়াইন নদের ১০০ মিটার দখল করে চারটি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছে খোদ উপজেলা পরিষদ।

মাকুন্দা:
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সিঙ্গেরকাচ বাজারে মাকুন্দার ৬০ মিটার তীরে ১২টি স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। লামাটুকেরবাজার এলাকায় নদীটির আরও ১০ মিটার জায়গায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি স্থাপনা। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মোহাম্মদপুর বাজার অংশে মাকুন্দার ৪০ মিটার জায়গা দখল করে ৯টি স্থাপনা তৈরি করে ভোগ করে আসছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

মরা ধলাই:
পাথরের রাজ্যখ্যাত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এই মরা ধলাই নদের ৪০০ মিটার দখলে। সেখানে পাকা ঘর ও দোকানপাটসহ ৩৫টি স্থপনা নির্মাণ করে রেখেছেন স্থানীয় দখলদাররা। তাদেরও নাম চিহ্নিত করতে পারেনি পাউবো। তবে স্থানীয়দের তথ্যমতে, এ নদীটি প্রায় নিশ্চিহ্ন।

তৈমুর নগর:
প্রায় ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদ দখল-ভরাটে একেবারে নিশ্চিহ্ন। পাউবোর তথ্যমতে, তৈমুর নদের ৪০ মিটার জায়গা দখল করে পাকা ঘর টিনশেডের দোকানসহ ১৯টি স্থপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, দখল, দূষণ ও ভরাটে এই নদের অস্তিত্বই নেই।

সূর্যখালী খাল:
পাথরের রাজ্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সূর্যখালী খালও রয়েছে নদীখেকোদের দখলে। এই খালের ৩০০ মিটার জায়গা দখল করে ২৫টি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন দখলদাররা। তবে পাউবো বলছে, এসব দখলদারের তথ্য খুঁজে পায়নি তারা।

এদিকে নদীখেকোদের দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী রক্ষা করতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, নদীর অভিভাবকদের চরম উদাসীনতার কারণে অবৈধ দখলদারদের দখলে নদীর তীর। নদীকে বাঁচাতে এসব দখলদারকে উচ্ছেদ করতেই হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয়ভাবে নদ-নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এই নদ-নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।  একপর্যায়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও গঠন করা হয়েছে। নদ-নদীগুলো যাতে দখলমুক্ত থাকে, সেই ব্যাপারে  এই কমিশন বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। নদী রক্ষায় সার্বিকভাবে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমার অনুরোধ, স্থানীয়ভাবে জনগণও যাতে এই ব্যাপারে সচেতন থাকেন।

নদীতে চর পড়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এমন মনে করে তিনি বলেন, তবে আমাদের দেখতে হবে এই চর পড়ার কারণে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে কি না। সিলেটের প্রেক্ষাপটে নদ-নদীতে আট মাস পানি থাকে। এই আট  মাস চলাচলে কোনো সমস্যা হয় না। বাকি চার মাস নদীর পানি শুকিয়ে যায়। তবু অবৈধ দখল যাতে না হয়, সে বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা আছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে আমাদের উচ্ছেদ অভিযানও চলমান রয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/এনএস

Link copied!