ডান হাত নয় বাম হাত দিয়ে চালাচ্ছেন সংসার। শুনতে অনেকটা অবাক করার মত হলেও আসলে সত্যি ও হৃদয়বিদারক। দুই এক বছর নয় প্রায় ৩০ বছর যাবত এক হাত দিয়ে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বলছিলাম চায়ের দোকানি প্রতিবন্ধী কাউছারের কথা।
ইচ্ছে করলেই ভিক্ষা করতে পারতেন কিংবা অন্যের সহযোগিতায় চালাতে পারতেন নিজের সংসার। কিন্তু কারও কোন সহযোগিতা ছাড়াই আজ ত্রিশ বছর যাবত সড়ক কিংবা নগরীর অলিগিলি দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাম হাতের জোরে। তবে ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর প্ররিশ্রম যে কারো মুখাপেক্ষি করেনা, কাউছারের চেয়ে ভালো উদাহরণ আর নেই।
জানা গেছে, শৈশবে টায়ফায়েড জ্বরে প্যারালাইজড হয়ে কাউছার ডান হাত হারিয়ে ছিলেন। যে অবস্থায় হাতটি আছে, তা একাবারেই না থাকার মতই। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি আর তাইতো সুস্থ হয়ে উঠা হয়নি কাউছারের। লেখাপড়াও জুটেনি কপালে, এই যন্ত্রনা অবশ্য কুরে কুরে খাচ্ছে কাউছারকে। তবে তিনি এবার পণ করেছেন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন আর তাইতো তিনি এই বাম হাতের জোরে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। আর এর খরচ যোগান দিচ্ছেন চা বিক্রি করে।
কাউছার বলেন, আম কারো কাছ থেকে সাহায্য চাইনা। যদি আমাকে যাত্রী ছাউনিতে একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দিত কেউ, তাহলে আমার পরিবারের জন্য ভালো হত। এখন শুধু কিছুক্ষন পর পর পুলিশ বিরক্ত করে। ফুটপাতে ব্যবসা করতে দেয় না।
কাউছারের দুই ছেলে এক মেয়ে। তিনজনই লেখাপড়া করেন শহরের কোন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সুতারাং বলাই যায় এ পৃথিবীতে কাউছারের বাম হাতটি ছাড়া তার পাশে আর কেউ দাড়ায়নি, কখনো পাশে পাননি তিনি কোন হৃদয়বানকে। তবে এখন আর কাউছারও কাউকে পাশে চাননা। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে একপাশে ভাসমান কাউছারের এই ছোট্ট চায়ের দোকান। চা, বিস্কুট আর কলা ছাড়া তেমন কিছু নেই দোকানে। সকাল থেকে বিকেল অবদি দোকানটি খোলা রাখেন তিনি। তবে কাউছারের অভিযোগ, প্রশাসনের কারণে অনেক সময় ব্যবসা করতে পারেন না । তার মতে, কত মানুষইতো যাত্রীছাউনিতে দোকান পান, যদি কাউছারের এমন একটি স্থায়ী দোকান হত, তবে তিনি ৫ সদস্যদের পরিবার নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়েপড়ে থাকতে পারতেন।
প্রতিবেদনটি দেখার পর দরদ জাগবে সবার মনে। এগিয়ে আসবেন সবাই, পাশে থাকবেন প্রতিবন্ধী কাউছারের এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।
একুশে সংবাদ/রা.হো.প্রতি/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :