পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চাঁদকে শুধু পৃথিবীর মাটি থেকে দেখেই মানুষ থেমে থাকেনি। যন্ত্র তৈরি করে, প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের সাহায্যে তার মাটিতে পা রেখে এসেছে।
চাঁদে মানুষ পাঠানো থেকে শুরু করে একাধিক অভিযান, অনুসন্ধান ক্রমাগত চালিয়ে গিয়েছেন পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে আমেরিকা বরাবরই অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে। চাঁদ নিয়েও বহু গবেষণা, পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে নাসা। তাদের মাধ্যমে চাঁদের অজানা তথ্য জানতে পেরেছে বিশ্ববাসী।
বলা চলে, এত দিন মহাকাশ গবেষণায় নাসার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, পরিকাঠামো, সবদিক থেকেই বিশ্বের অন্য সমস্ত মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল আমেরিকা।
মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একসময় অবশ্য নাসার সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে রাশিয়ার সেই দাপট এখন আর নেই। কিছু দিন আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। তা ব্যর্থ হয়েছে।
তবে নাসাকেও মহাকাশের ব্যাপারে ‘শেষ কথা’ হয়তো আর বলা চলে না। আমেরিকাকে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে চিন। গত কয়েক বছরে তারাও মহাকাশ গবেষণায় প্রভূত উন্নতি করেছে।
২০০৭ সালে চাঁদের উদ্দেশে একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল চিন। সেটি চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে। ২০১০ সালে একই রকমের আরও একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠায় চিন।
চিনের চাঁদ কেন্দ্রিক মহাকাশ অভিযানগুলি ‘চ্যাং’ সিরিজের অন্তর্গত। ২০১৩ সালে চাঁদে প্রথম মহাকাশযান অবতরণ করায় চিন। সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল চ্যাং-৩।
আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পর তৃতীয় দেশ হিসাবে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছে চিন। এই কৃতিত্বের তালিকায় চতুর্থ ভারত। ২০২৩ সালে ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে।
১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম মহাকাশচারী পাঠিয়েছিল আমেরিকা। অ্যাপোলো অভিযান সফল হওয়ার পর থেকে চাঁদ নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। চাঁদে আবার মানুষ পাঠানো, সেখানে মহাকাশচারীদের ঘাঁটি তৈরি করা এখন বিজ্ঞানীদের অন্যতম লক্ষ্য।
এই ক্ষেত্রেই আমেরিকার নাসাকে টপকে যেতে পারে চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সিএনএসএ (চিন ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)। একটি সূত্রের দাবি, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা মহাকাশে চিনের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
চিনা সংস্থা জানিয়েছে, আগামী দিনে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এছাড়া, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি স্থায়ী গবেষণা ঘাঁটিও তৈরি করবে তারা। চিনের দাবি, এ সব হয়ে যাবে চলতি দশকের মধ্যেই।
চিনের অগ্রগতি দেখে বিস্মিত আমেরিকার গোয়েন্দারাও। তারা নাকি প্রকাশ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চিন যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে চাঁদের অভিযানে এগিয়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে তারা ছাপিয়ে যেতে পারে নাসাকেও।
এই সূত্রে নাসার সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উঠে এসেছে। ঘোষিত অভিযানের শেষ দিন আরও খানিক পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
চাঁদে আবার মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে নাসা। তারা জানিয়েছিল, আর্টেমিস-৩ অভিযানে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চাঁদের মাটিতে আবার পা রাখবেন মহাকাশচারীরা।
কিন্তু সম্প্রতি নতুন ঘোষণায় নাসা জানিয়েছে, চাঁদে মানুষ পাঠাতে আরও কিছুটা দেরি হতে পারে। ২০২৫-এর পরিবর্তে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করতে আমেরিকার সময় লাগতে পারে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। এত দিন ২০৩০-এর মধ্যেই তা করার কথা বলেছিল নাসা।
আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে মহাকাশ গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ ‘অস্ত্র’ বলে মনে করে চিন। এই একটি বিষয়ে তাদের ধারাবাহিক অগ্রগতি তাই আমেরিকার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাকাশের ইঁদুরদৌড়ে শেষ হাসি কে হাসবে, সেটাই এখন দেখার।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :