ফরিদপুরে বসন্তের আগমনে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজেছে। চারিদিকে কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছে নানা রকমের ফুল।
সব কিছুর মধ্যে ও প্রকৃতিকে যেন সাজিয়েছে শিমুলে ফুলের শোভায় এক নতুন রূপে। বাতাসে দোল খাচ্ছে শিমুল ফুলের রক্তিম আভায় । গাছের ডালে ফুটে থাকা বিভিন্ন ফুলের সাথে শিমুল ফুলে মানুষের মনকে যেন রাঙিয়ে তুলেছে।
শিমুল গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠছে। তাছাড়া বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না এই গাছে রয়েছে নানা উপকারিতা এবং অর্থনৈতিক ভাবে ও বেশ গুরুত্ব বহন করছে। প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোমবাক্স সাইবা লিন’। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার হয়।
সোমা নামে এক নববধূ বলেন, শিমুল ফুলের সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করবে যে কাউকে। শিমুলগাছের পাশ দিয়ে গেলে মনটা একদম জুড়িয়ে যায়। এই সৌন্দর্য বর্ণনা করা কঠিন। আমাদের সকলের উচিত এই শিমুলগাছ না কেটে এটাকে সংরক্ষণ করা।
সন্দীপন নামে এক কলেজ ছাত্র বলেন,ফরিদপুরে এক সময় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। আর এই গাছের উৎপাদিত তুলা গ্রাম-গঞ্জে খুব জনপ্রিয় ছিলো।এছাড়া ঔষধি গাছ হিসেবেও বেশ পরিচিত। শিমুল গাছের তুলা দিয়ে সুতা, বালিশ, লেপ, তোষক তৈরিতে কোনো জুড়ি ছিল না। নিজের শিমুল গাছের তুলা বিক্রি করে সাবলম্বী হয়েছে অনেকে। আবার শিমুল তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করে উপার্জনও করতো অনেকে।
শংকরী নামে এক গৃহবধূ বলেন, ফাগুনের প্রথমেই লাল রঙের ফাগুন ঝরা রঙিন পাঁপড়িতে রাঙিয়ে যেত শিমুল গাছ আর চৈত্রের শেষে ফুটন্ত তুলা বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে মাতিয়ে রাখতো প্রকৃতিকে। সাঁদা তুলায় ঠেঁকে যেত নীল আকাশ। তখন পরিবেশটাও হতো অন্যরকম। নানা ছন্দে ও গানের খোরাক যোগাতো কবি সাহিত্যিকদের। কিন্তু গ্রাম-বাংলার বুক থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মূল্যবান এই শিমুল গাছ। যা এক সময় অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি এনে দিত। যখন কোনো কিছু প্রকৃতি থেকে খোয়া যায়, তখন তার কদরও অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর শিমুল গাছ ও ফুল হচ্ছে তেমনই।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :