জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ ও সম অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠনের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন দ্বারা রাষ্ট্রীয় নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধীদের অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ন্যায় সমান অধিকার ভোগ করার সকল প্রকার সুযোগ তৈরি করা এই সংগঠনগুলোর কাজ।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকগুলো সংগঠনের মধ্যে বিস্ক্যান এর প্রধান পদক্ষেপ প্রবেশগম্যতা। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের জন্য রিসার্চ, ট্রেনিং, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, ইমার্রেন্সি সাপোর্ট, চিকিৎসা, ওয়েবসাইট তৈরি উল্লেখযোগ্য।
রাজধানী ঢাকার বনশ্রী এলাকায় অবস্থিত বিস্ক্যান অধীনে কয়েকটি কর্মসূচির মধ্যে প্রাঙ্গন নামে শিশুদের শিক্ষাঙ্গন এবং থেরাপি সেন্টার রয়েছে। নারী প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে সচেতন করা এবং এলক্ষ্যে সিডো আইন সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি। এছাড়াও নারী ও শিশু প্রতিবন্ধীদের যে সকল প্রতিবন্ধকতা আছে তা প্রতিকারে কাজ করে যাচ্ছে। সাবরিনা সুলতানা পরিচালিত ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ট্রেনিং, কর্ম উপযোগী বা উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করে আসছে। শারিরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চলাফেরার জন্য সকল প্রতিষ্ঠানে র্যাম সুবিধা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যারেল বই এর সহজলভ্যতা, সাদা ছড়ি, ফিজিওথ্যারাপি ইত্যাদি বিষয়ে অবদান রাখছে। জাতীয় জাদুঘরে র্যাম নির্মানে তাদের বড় অবদান বলে জানান সংগঠনের পরিচালক। প্রতিবন্ধী নারীদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনের নিয়মিত সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে শিশুমেলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, প্রতিবন্ধী শিশুসহ সকল প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে ডিজএ্যাবল্ড চাইল্ড পাউন্ডেশন (ডিসিএফ) নামে একটি সংগঠন ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে। স্বেচ্ছাসেবী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত ওপিডি সংগঠনটি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকল্প পরিচালনা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে পরিচালিত বেসরকারী সংগঠন।
প্রতিবন্ধীদের আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, লক্ষ নির্ধারণ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, সম্মান ও সাহসের সাথে সুন্দর জীবন যাপন ও সর্ব ক্ষেত্রে সম সুযোগ তৈরিতে কাজ করছে। সংগঠনটির প্রধান অফিস ময়মনসিংহে এবং ঢাকায় শাখা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও সমাজে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই প্রকাশনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। প্রায় ১৫ হাজার প্রান্তিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই সংগঠনের বিভিন্ন সেবার আওতায় রয়েছেন।
ইন্সটিটিউট অব ওয়েবিং বাংলাদেশের পলিসি কর্মকর্তা রিফাত পাশা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তিনি বিশেষ ভাবে উয়ুথদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালনা করেন। ইয়ুথ ক্লাবগুলোয় প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মারাকেশ ক্যাম্প করে তাদের প্রশিক্ষণ দেন। প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজন, ট্রান জেন্ডারের বিনোদন, পরিবেশ, জলবায়ু, প্লাস্টিক অনলাইন টক শোর আয়োজন করেন। ২ দিনব্যাপী ক্যাম্পকুল আয়োজন করেন।
প্রতিবন্ধী মানুষের দাবি ও অধিকার অর্জনে তাদের একসাথে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান এ্যাকসেস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মহুয়া পাল। অধিকার অর্জনের অন্যের মুখের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের উন্নয়ন করতে হবে। সকল সংগঠন ভিন্ন ভাবে কাজ করলেও সবার লক্ষ্য হবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন।
এককভাবে অধিকার অর্জন সম্ভব নয়, তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা সংগঠনগুলোকে সংগঠিত হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই বলে জানান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন্নাহার মিষ্টি।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংঘবদ্ধ হয়ে জাতীয় পর্যায়ে কথা বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে বলে জানান বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) এর নির্বাহী পরিচালক সাত্তার দুলাল। প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাদের অবশ্যই সংগঠিত হতে হবে। একার পক্ষে কখণোই অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :