বর্ষার কদম-কেয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটতে শুরু করে চালতার ফুল।পাপড়ির শুভ্রতা, হলুদ পরাগ ও তারকাবৃত্তির গর্ভদন্ড চালতা ফুলের মোহনীয় রূপ প্রকৃতিজুড়ে ঝিলিক তুলেছে। এতে মুগ্ধ সৌন্দর্যপিপাসুরাও। কদমের পরে বর্ষাকে চেনা যায় চালতা ফুলে।
এ ফুল সাদা রঙের। সুরভিত এই ফুলের ব্যাস ১৫ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাপড়ি থাকে; বৃতিগুলো পাপড়িকে ঘিরে রাখে। পাপড়ির শুভ্রতা, হলুদ পরাগ ও তারকাবৃত্তির গর্ভদন্ড চালতা ফুলের মোহনীয় রূপ প্রকৃতিজুড়ে ঝিলিক তুলেছে।
এর আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica । শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশে চালতা জন্মে। ইংরেজিতে Dillenia indic নামে পরিচিত। বিশেষত এটি ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত।গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। শাখা-প্রশাখা অবিন্যস্ত ও প্রসারিত। সবুজ পাতা খাঁজকাটা ধরনের। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে গাছটির দেখা মেলে। গাছটি থেকে শক্ত কাঠ হয়। এছাড়াও নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় চালতার কাঠ।
চালতা ফুল খুবই ক্ষণস্থায়ী। ভোরবেলাতে ফোটা ফুলের পাপড়ি সন্ধ্যায় ঝরে পড়ে। তাই চালতা ফুলের প্রকৃত রূপ দেখতে হলে দুপুর হওয়ার আগেই দেখতে হবে। তাই হঠাৎ এ ফুলের দেখা পাওয়া অনেকটা আবিষ্কারের মতোই।
জানা যায়, বহুবিধ ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন এ ফল পাকে বর্ষার পর। পাওয়া যায় শীতকাল পর্যন্ত। আষাঢ়-শ্রাবণে ফোটে চালতা ফুল। সুগন্ধি এ ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে। পাপড়িগুলো আঁকড়ে থেকে ফলে রূপান্তরিত হয়। এ ফুল সাদা রঙের। ফোটার পর ফুলে মৌমাছির আগমন ঘটে। মৌমাছিরা মধু আহরণ করতে গিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে। এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে এবং ধীরে ধীরে সেটি একটি পরিপূর্ণ ফলে পরিণত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, এ উপজেলায় এক সময় দেশীয় জাতের ফল চালতার ব্যাপক ফলন ছিল। বিভিন্ন বাগানে পাকা চালতা গাছ থেকে পরার ভয়ে এবং চালতা বাগানের ভেতরে পরে থাকায় হাঁটা মুশকীল হয়ে যেত কিন্ত চিত্র এখন আর চোখে পরেনা। একটি চালতা ফলের গাছে বছরে একবারই ফল ধরে। প্রতিটি চালতা ফল স্বাভাবিকভাবে ২০০ থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে।
ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্র বর্ত্তী বলেন, ‘একসময় গ্রামীণ জনপদের রাস্তার পাশে, পুকুরের ধারে ও বাড়ির আঙ্গিনা চালতা গাছ দেখা যেত। বর্তমানে সে দৃশ্য চোখে পড়ে না। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও প্রকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এই বৃক্ষ লাগানো প্রয়োজন । তা না হলে আগমী প্রজন্ম এ বৃক্ষ অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :