আজ একজন নারীর কথা বলবো যিনি পটুয়াখালী জেলার রাংগাবালীর উপজেলা বড়বাইশদিয়াতে জন্মগ্রহণ করেও হয়েছেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।বঙ্গোপসাগর-উপকূলবর্তী পটুয়াখালী জেলার আগুনমুখা নদীর কোলে সৃষ্ট বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নের কাঁটাখালী গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১৪ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এক সংগ্রামী নারী নূরজাহান বোস।
বাবা আবদুর রাজ্জাক, মা জোহরা বেগম। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ির পাশের স্কুলে পড়াশোনা তাঁর। মায়ের উৎসাহে সব প্রতিকূলতা জয় করে পটুয়াখালী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯৫৪ সালে। তখন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে চাচাকে সাহায্য করতে গিয়ে তৎকালীন মার্কসবাদী যুব নেতা ইমাদউল্লার সঙ্গে পরিচয়। তার সঙ্গেই ১৯৫৫ সালে বিয়ে হয় তাঁর। ১৯৫৬ সালে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে এমাদুল্লাহর মৃত্যু হয়। সেই বছরই নূরজাহান এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু নূরজাহান বোসের সংগ্রাম থেমে থাকেনি। প্রথম সন্তান জসিমের জন্মের পর তিনি একটি স্কুলে হোস্টেল সুপারের দায়িত্বগ্রহণ করেন। তার মৃত স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্বদেশ বোসের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জীবন শুরু করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস নিয়ে বিএ পাশ করে এমএ ভর্তি হন।
অর্থনীতিবিদ স্বদেশ বোসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর চাকরির সুবাদে করাচি ও কেমব্রিজ যাত্রা। ১৯৭১ সালে দুজনেই মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিতে ভারতে চলে যান। এরপর স্বামীর চাকরিসূত্রে ওয়াশিংটনে চলে যান। ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকা থেকে এমএ করেছেন।
তাঁদের বড় কন্যা আইনজীবী মনিকা বোস যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ে করে বসবাস করেছেন। ছোট মেয়ে অনিতা নিউ ইয়র্ক-এ ফাইনান্সিয়াল জগতে কাজ করে। এক কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট । আমেরিকান বর নিয়েও মনিকা ঘরসংসার, কাজ সেরেও কন্যা তূলিকে শুদ্ধ বাংলা শেখাতে পুরোপুরি নিষ্ঠাশীল ও নিবেদিত-প্রাণ। মনিকা নিজে ছবি আঁকে অবসর সময়ে। জ্যৈষ্ঠ সন্তান জসীম এশিয়াটিক ব্যাঙ্কের কান্ট্রি প্রতিনিধি হয়ে বিদেশে আছেন।
২০০০ সালে নূরজাহান বোস এবং তার কন্যা মণিকা জাহান বোস নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আশা ও সংহতি নামে দুটি অলাভজনক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাওয়া নূরজাহান বোস রচিত আত্মজীবনী আগুনমুখার মেয়ে বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে উল্লেখ করছি—‘বাংলাদেশের আগুনমুখা নদীপাড়ের এক সাধারণ ঘরের মেয়ে কী বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের পটোমাক নদীর পাড়ে তাঁর অর্ধেকের বেশি জীবন কাটিয়ে দিল, নূরজাহান বোসের আগুনমুখার মেয়ে গ্রন্থে আছে সেই বিস্ময়কর আত্মকাহিনি। লেখিকার সেই স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রগতিশীল আন্দোলনের নানা কথা, সংস্কারগ্রস্ত সমাজের সত্য বিবরণ, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দমবন্ধ-করা দিনগুলোর জীবন্ত চিত্র। তবে সমস্ত ছাপিয়ে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অদম্য মনোবলে ভরা একটি মেয়ের জীবনযুদ্ধের তীব্রতা, বাল্যকালেই এক দুরন্ত নদী যাকে দীক্ষা দিয়েছে জীবনের। প্রতিকূল পরিবেশে জন্ম, দুর্ভাগ্য হানা দিয়েছে, পিছিয়ে পড়া সমাজে অবিচার নিত্যসঙ্গী, কিন্তু কিছুতেই হারেনি আগুনমুখার মেয়ে।’যিনি পরম মমতায় খবর রাখেন নিজের এলাকার মানুষ গুলো কেমন আছেন, আর্থিক সাহায্য করেন। এ যেন আমাদের(রাঙ্গাবালীর) মাদার টেরেসা ।
পুরষ্কার/অর্জনঃ
১) অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার (২০০৫)
২) অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (২০১০)
৩) বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৬) । মোঃ ফিরোজ ফরাজী রাঙাবালী পটুয়াখালী প্রতিনিধি ঃ01724032532
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :