AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভালোবাসা দিবসের গল্প


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪:৪০ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ভালোবাসা দিবসের গল্প

প্রথম দেখাতে পছন্দ, ভাব-ভালোবাসা হয়ে গেল। শুভ ফুল নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখে লাবুনী প্রশ্ন করলো তোমার হাতে ফুল কেন? 
শুভ → গোলাপ ফুলটা তোমার জন্য এনেছি নাও? 
লাবুনী → খুশিতে আত্মহারা হয়ে ফুলটা হাতে নিয়ে বললো, থ্যাংককিউ।
শুভ → আমি থ্যাংককিউ নেবনা। 
লাবুনী → তাহলে কি চাও?
শুভ → আগামীকাল বলবো। 
লাবুনী → গতকাল ফুলটা কেন দিয়েছো এখন বলবে? 
শুভ → ধরো আজও এই ফুলটা তোমাকে দিলাম নাও? গতকাল ছিলো রোজ ডে তাই তোমাকে গোলাপ ফুল দিলাম। আর আজ প্রোপজ ডে, তাই আজও তোমাকে ফুল দিলাম।

লাবুনী → থ্যাংকস... 
শুভ → আমি আগেও বলেছি থ্যাংকস আমি চাইনা। আমি চাই তোমার মুখের মিষ্টি হাসি। তুমি প্রতিদিন আমার সামনে এসে আমাকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে যাবে। আর সারাজীবন তুমি এভাবেই হাসি-খুশিতে থেকো এটাই আমি চাই।

লাবুনী → আমিও চাই তুমি সারাজীবন হাসি খুশিতে থাক। উভয়ের মাঝে ভাবনার জগৎ আরো গভীর হতে লাগলো। ৯ ফেব্রুয়ারি উৎফুল্ল মনে ক্লাসের সবাইকে চকলেট খাওয়ালো লাবুনী। বন্ধু-বান্ধবরা বলাবলি করছে তোরে ইদানীং বেশি খুশিখুশি লাগছে, ব্যাপার কি বল? নিশ্চয়ই হামছে তুমছে ফেয়ার কর? বন্ধু-বান্ধবদের প্যাঁচানো প্রশ্নে লাবুনীর মুখ খোসে বেরিয়ে গেল নাবলা সব হৃদয়ের কথা। তার হৃদয়ের মাঝে ভালোবাসার উৎসবের আমেজ বইছে। এসময় ভালোবাসা আর বসন্তের ছোঁয়া একাকার হয়ে চারিদিকে শুধু ভালোবাসা বাসি। ক্লাসে শিক্ষক আসার পূর্বে লাবুনীকে বারান্দায় ডেকে শুভ বলে একবার বল তুমি আমাকে ভালোবাস... শুধু একবার বল... ? 
লাবুনী → আজ নয় অন্যদিন, সামনের দিবসের দিন বলবো। শুভ → আজ বললে কি হয়! সকল দিবসে শুধু নয়, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসবো। ১১ফেব্রুয়ারি উভয় প্রমিজ করলো ক্লাস রুম সাজিয়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে প্রপোজ করার।

প্রপোজের দিন নির্ধারন হলো ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯। তখন শুভ আর লাবুনী দু’জনই একই স্কুলে ক্লাস এইটে পড়তো। গোলাপ ফুল দিয়ে লাবুনীকে প্রপোজ করলো শুভ। শুভ প্ররমিজ করলো প্রতি বছর আজকের এই দিনে তোমার সারাটি জিবন পছন্দের গোলাপ আমি দেব। লাবুনীও ফুল পছন্দ করতো, তাই সকল দিবসে এবং প্রতি মাসের ১৪তারিখ সহ বছর ঘুরে আসলে ১৪ফেব্রুয়ারি শুভ ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে লাবুনীকে গোলাপের তোড়া দিতো আর সাথে থাকতো একটি চিঠি। যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালোবাসে।

ক্লাস নাইনে উঠার পরে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শুভ মাথায় আঘাত পায়। এতে তার দু’চোখে আঘাতের প্রভাব পড়ে। স্বাভাবিক ভাবে সবকিছু দেখতে পারেনা। তখন তার সুন্দর আনন্দোময় জীবন ব্যাহত হয়। লাবুনী এখন আর শুভকে আগের মতো ভালোবাসে না। দশম শ্রেণীতে উঠার পর হঠাৎ একদিন স্কুলে খেলা ধুলার অনুষ্ঠানের দিন শুভ স্কুলের বারান্দায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আশপাশের ছাত্র-ছাত্রী এ অবস্থা দেখে দ্রুত তার কাছে ছুটে আসে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলে শুভর মৃত্যু হয়।

কিন্তু শুভ মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তেও লাবুনী একই ভাবে চিঠি সহ গোলাপের তোড়া পেল। চিঠিতে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে যতটুকু ভালোবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালোবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালোবাসা আরো শতগুণ বাড়বে”। লাবুনী ভাবল, শুভ মারাগেল। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার বাসায় গোলাপের তোড়া আর চিঠি কোথায় থেকে এল!! মন খারাপ করে ভাবতে লাগলো, এমন একটা দিনে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দু’জন হেটে ছিলাম। তার বাড়ীতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে নেয়নি তাই যাওয়া হয়নি। অথচ বাড়ীর নিকটবর্তী সেই হাটা চলার পথের পাশে তার কবর দেখতে হয়েছে আমাকে। ভাবতে ভাবতে লাবুনী ফুলগুলিকে সুন্দর করে গুছিয়ে-সাজিয়ে রাখল।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন বাসায় সকালে বন্ধু মাসুদ এসেছিল। তার সাথে দেখা হয় দরজার সামনে। সে চিঠিসহ গোলাপের তোড়া দেয় আমায় গত বছর। স্কুল বন্ধ থাকায় শুভ সরাসরি আমায় দিতে পারেনি। বাবা-ভাইদের ভয়ে সে বাসায় আসেনি। তাই বন্ধু মাসুদের মাধ্যমে সে চিঠি আর গোলাপ পাঠায়। অবাক হয়ে চিঠিটি পড়ে দেখলাম এটা তার ভালোবাসা পাঠিয়েছে। কিন্তুু এখন আবার কে আমার সাথে মজা করছে? লাবুনী তার বন্ধু নায়েবকে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। নায়েব তাকে যা বলল তা হল “আমি জানি যে শুভ তোমাকে খুব বেশি পছন্দ করতো, সে অনেক দিন আগে মারা গিয়াছে। আমি এও জানি তুমি আজকে আমাকে ফোন করেছ কেন? নিশ্চয়ই তার জীবনের সব জানতে চাইবে?

নায়েব → তাহলে শুন, তোমার ভালোবাসা অনেক আগেই একদিন তোমার জন্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপ ফুল আর চিঠি তোমাকে দিতে আমাকে দিয়ে ছিলো। তখন গোলাপ আর চিঠি তোমাকে না দিয়ে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। অনেক দিন পর বাসায় পুরনো জিনিষ পত্র খুঁজতে গিয়ে এই চিঠিটি পেলাম। ভাবলাম এটা তার আমানত তোমার জন্য, আগে না দিলেও এখন তোমাকে দেয়া দরকার। তাই এখন সেই চিঠির সাথে ফুল কিনে দিয়ে বন্ধু বিপুলের মাধ্যেমে তোমার কাছে পাঠিয়েছি। সে তোমাকে তিনদিন খোঁজ করে বাসায় না পেয়ে দরজার সামনে রেখে চলে আসে। লাবুনী তখন বন্ধু নায়েবকে বেইমান,মির জাফর বলে তার উপর ভীষণ চটে গিয়ে ফোন কেটে দেয়। তার পর লাবুনী চিঠির বাকী অংশ হাতে নিল পড়তে, তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটি খুলে দেখতে পেল, সেখানে তার জন্যে আরো কিছু লিখে গেছে।

চিঠিতে লিখা ছিল, এক সময় স্কুল জীবনে সবচেয়ে বেশি কথা তোমার সাথে হতো। আমাকে ছাড়া এক মহত্ত্ব ভালো লাগতোনা তোমার। তাই তোমার সাথে অধিক সময় কাটিয়েছি। একদিন না দেখলে কথা না বললে সেই দিনটা তোমার কষ্টে কাটতো। অভিমানে আড়ালে থাকলেও হৃদয় থেকে দূরে নয় তুমি। তোমাকে নিয়ে এ  হৃদয়ে বৃন্দুবৃন্দ করে ভালোবাসার সিন্ধু গড়েছিলাম। খোদাই করে লিখেছিলাম একমাত্র তোমারই নাম। আর সেই তুমি সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে ব্যথার সাগরে ভাসিয়েছ। আমাকে দুঃখের আগুনে জ্বালিয়ে নিশ্বঃ করে দিয়েছ। শুধু তোমাকে নিয়ে অন্তবিহীন এ দু‍‍`চোখে স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ আমি নিঃশ্ব। তবুও তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই। শুধু মনেরেখ এ জীবনে প্রথম মনটা তোমাকে দিয়ে ছিলাম।

কিভাবে আসলো ভালোবাসা দিবস!

আমি এতোটা হতভাগ্য যে তোমার বিরক্তির কারন হয়ে গেলাম। জীবনটা তুচ্ছ মনে হচ্ছে, তাই অন্য স্কুলে গিয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বন্ধুরা যেতে দেয়নি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন আমি একেবারে চলে যাব। চলে গেলে তোমার কষ্ট লাঘব হবে, নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবে তুমি। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় হাসি সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে চেয়েছি। বিধির লিখন যে হৃদয়ে থাকে সে জীবনে আসেনা। তখন মানুষের কিছু করারও থাকেনা।

ভালোবাসা জীবনে সত্যি হয়ে একবারই আসে। যখনই তুমি কোন ফুল দেখবে তখনি আমাদের ভালবাসার কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে স্কুল জীবনে একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সব সময় হাসি খুশিতে থাকতে চেষ্টা করবে। আমি জানি এটা অনেক কঠিন হবে, তবুও আমি আশীর্বাদ করি তুমি পারবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি শুভর কবরের পাশে দাড়িঁয়ে লাবুনী বলছে, তোমাকে ভালোবাসার ফুল দিচ্ছি, গ্রহণ কর। মনে রেখ তুমি, তোমারি ছিলাম আছি থাকবো। তুমি কি জীবনে একবার আমার সাথে কথা বলবে, দেখা করবে শুধু একবার! নিয়ে যাও তোমার কাছে চিরদিনের জন্যে আমায়। সব সময় মনে পড়ে তোমায়, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। “নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি” প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।” 

 

একুশে সংবাদ/এনএস

Link copied!