চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ১৩০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হবে। ২০২১ সালের তুলনায় ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে ৫২ দশমিক নয় লাখ। এমনকি, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটি দাবি করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি।
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য লানসেট অ্যান্ড দ্য লানসেট ডায়াবেটিস এবং অ্যান্ডোক্রিনোলজি জার্নালে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ ৩০ বছর ধরে কোনো দেশেই ডায়াবেটিসের হার কমেনি। আর ২০৫০ নাগাদ যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে তাদের ৯৫ শতাংশই টাইপ২-তে।
ডায়াবেটিসের ওপর প্রকাশিত হওয়া এই তথ্যকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ রোগকে ছাড়িয়ে গেছে ডায়াবেটিস। এটি মানুষ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকি।
মন্টেফিওর হেলথ সিস্টেম ও নিউ ইয়র্কের অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিনের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. শিবানী আগরওয়াল বলেন, ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য হুমকি ডায়াবেটিস। আগামী তিন দশকের মধ্যে প্রতিটি দেশে এই রোগের রোগী ব্যাপক হারে বাড়বে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।’
এদিকে, জাতিসংঘের অনুমান ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯৮০ কোটি। এর মানে দাঁড়ায় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রতি সাতজন বা আটজনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে।
প্রতিবেদনে গবেষকরা লেখেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টাইপ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন। তবে, এই টাইপের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিকে রোগী শনাক্ত করা গেলে সম্পূর্ণরূপে এটি প্রতিরোধ করা যায়। যা-হোক, সমস্ত প্রমাণ ইঙ্গিত করছে যে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। স্থূলতাসহ একাধিক কারণেই এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।’
গবেষকরা আরও লেখেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে কাঠামোগত বিদ্বেষ ও ভৌগলিক অসমতার কারণে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস, অসুস্থতা, অন্যান্য রোগ ও মৃত্যু বাড়ছে। সংখ্যালঘুরা ইনসুলিনের মতো জরুরি ওষুধগুলো পাচ্ছে না। নিম্ন মাত্রার জীবনযাত্রার জন্য তাদের আয়ু কমে যাচ্ছে।
মহামারি বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসের বৈষম্যকে আরও প্রশস্ত করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে গবেষকরা। তারা বলেছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা কোভিড -১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এই গবেষণা প্রতিবেদনে অন্যতম সহ-লেখক ও দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আলিশা ওয়েড বলেন, ‘ডায়াবেটিস একটি বিরাট সংকট। এর ওপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলোকের প্রভাবকে স্বীকার করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস প্রতিরোধের প্রচেষ্টায় এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ও ইন্সটিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্সস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের প্রধান বিজ্ঞানী লিওনে ওঞ্জি বলেন, ‘মূলত আমাদের খাদ্যভাস পরিবর্তনের জন্য ডায়াবেটিস হচ্ছে। সর্বশেষ ৩০ বছরের মধ্যে অনেক দেশই তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যভাস থেকে দূরে সরে এসেছে। ফলমূল, শাকসবজি ও সবুজ খাবার থেকে তারা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের দিকে ঝুঁকেছে।’
এই গবেষকের অনুমান, ২০৪৫ সালের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস রোগী বাস করবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। লিওনে ওঞ্জি বলেন, ‘ধনী দেশগুলোর মধ্যেও ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার কম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার দেড় গুণ বেশি।’
একুশে সংবাদ/এপি
আপনার মতামত লিখুন :