তামাক ব্যবহারজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। আইন সংশোধন যত দেরি হবে, তামাকজনিত মৃত্যু ততই বাড়তে থাকবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিকসহ তামাকবিরোধী নেতারা।
রোববার (২৩ জুলাই) বেলা ১১টায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।
ভাচুর্য়াল বৈঠকে জানানো হয়, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। কাজেই বিদ্যমান আইনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ ৬৭টি দেশ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি কমাতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমান আইনে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তরুণ ও শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিক্রয়স্থলের দৃশ্যমান স্থানে তামাকপণ্যের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। তরুণদের সুরক্ষায় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫০টি দেশ বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেরও উচিত হবে বিক্রয়স্থলে তামাকপণ্যে প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, বর্তমানে তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভারতসহ কমপক্ষে ৩২টি দেশ ইতিমধ্যে এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীটি দ্রুত পাস করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়।
ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাক মৃত্যু ঘটায়। আমি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তামাকের ক্ষয়ক্ষতি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করে খসড়া সংশোধনীটি দ্রুত পাস করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান বলেন, ই-সিগারেট তামাকের মতোই ক্ষতিকর। তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেটসহ সব ধরনের ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও সাংবাদিক মিনার মনসুর বলেন, আইন শক্তিশালী করার পাশাপাশি তামাকের ভয়াবহতা কমাতে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে।
এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ জুলহাস আলম বলেন, শিশু ও নারীসহ সকল অধূমপায়ীকে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দ্রুত আইন সংশোধন করে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সব সংস্থার উচিত হবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে একযোগে কাজ করা।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো তরুণ ও কিশোরদের তামাকে আকৃষ্ট করতে বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের প্যাকেট প্রদর্শন করছে। এটি নিষিদ্ধ করতে হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানে আত্মার কনভেনর মোর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নেন।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :