অনেক কারনেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পরতে পারে আবার মাড়ি ও দাঁত দুর্বল হলেও , মাড়ি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় একটু বেশি থাকে যা আমরা অনেকেই অবহেলা করে থাকি তবে এখন এই সময়ে জ্বরের সাথে অথবা জ্বর ছাড়াই মাড়ি দিয়ে রক্তপাতকে অবহেলা করা যাবে না। এটি হতে পারে ডেঙ্গু জ্বরের একটি অন্যতম উপসর্গ।
আমরা আগে জানতাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে, শরীর ব্যথা, গিরায় গিরায় ব্যথা, মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা থাকে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর আপনা আপনি কমে যায়। এ সময় প্ল্যাটিলেট কমে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। ব্রাশ করতে গিয়ে দাঁতের গোড়া থেকে বা নাক থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে।
তবে এবারের চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। এবার দেখা যাচ্ছে, জ্বরের তাপমাত্রা খুব বাড়ছে না, শরীরের ব্যথাও তেমন হচ্ছে না। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা। অথচ জ্বর নেই এক দুইদিন পর শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটছে। রোগীর পাল্স পাওয়া যায় না, ব্লাড প্রেসার কমে যায়, প্রস্রাব হয় না, কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যাচ্ছে! এটাকে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এটা সবচেয়ে ভয়াবহ!
এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।
ডেঙ্গু জ্বরের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া। প্লাটিলেট কমে গেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। জ্বরের মধ্যে অথবা জ্বর ছিল এখন নেই এই সময়ে দাঁত মাজতে গিয়ে হঠাৎ মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানো উচিত। ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কমে গিয়ে রক্ত পাতলা হয়ে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। যাঁদের দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে থাকে এবং কখনো স্কেলিং করাননি, তাঁদের ডেঙ্গু হলে মাড়ি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। অনেক সময় হেমোরেজিক ডেঙ্গুর কারণে মারাত্মক শক সিনড্রোম হতে পারে । ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে।
ডেন-১ থেকে ডেন-৪, যেকোনো ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে। জোটবদ্ধ হয়ে ডেঙ্গুর জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে। সমস্যা হলো, ডেঙ্গু ভাইরাস আর রক্তের কণা প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার গঠন অনেকটা একই রকম হওয়ায় রক্তের শ্বেত কণিকা এদের আলাদা করে চিনতে পারে না। এ কারণে শ্বেত কণিকা ডেঙ্গুর ভাইরাসকে ধ্বংস করার সঙ্গে সঙ্গে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটকে আক্রমণ করে তাদেরও মেরে ফেলে। এ কারণে রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত কমতে শুরু করে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত শুরু হতে পারে।
যাঁদের জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে অথবা জ্বর হওয়ার পরে মাড়ি থেকে রক্তপাত হচ্ছে, তাদের ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি দ্রুত ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু তার লক্ষণ বদলাচ্ছে এবং মশাও তার চরিত্র বদলাচ্ছে।ফলে এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকতে হবে এবং কিছুতেই অবহেলা করা যাবে না। আর ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। যেমন পানি, ডাব, শরবত বেশি বেশি খেতে হবে। সাথে জ্বর উঠলে বা ব্যথা থাকলে শুধু প্যারাসিটামল খেতে হবে। অন্য কোনো ব্যথানাশক খাবেন না, নিজেরা কোনো এন্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। ডাক্তার পরামর্শ দিলে তবেই অন্য ওষুধ খাবেন।
একুশেসংবাদ.কম/বিএস
আপনার মতামত লিখুন :