AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কোমর ব্যথায় কী করবেন


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৩:২৪ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
কোমর ব্যথায় কী করবেন

সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো কোমর ব্যথা। জীবনে কোমরে ব্যথা হয়নি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। দেখা গেছে, জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময় এ সমস্যায় পড়েছেন। বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা সাধারণত ৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। এ সময়টিতে একজন আধুনিক পুরুষ ও নারী তাঁর পেশাগত জীবনে অনেক সময় ধরে বসে থাকার সঙ্গে যুক্ত হন। এ কারণে কোমরের মাংসপেশিগুলো ধীরে ধীরে তার নমনীয়তা হারাতে থাকে। কোমর ব্যথা আরো ঘটে সে সব লোকের, যাঁরা পারিবারিক দায়িত্ব পালনের বোঝা কাঁধে তুলে নেন। ফলে ভোগেন মানসিক চাপে।

কোমর ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ

আবেগজনিত চাপ মাংসপেশির টান ও ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। শরীরের অন্যান্য মাংসপেশির চেয়ে কোমরের পেশিগুলো সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত, তাই এগুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কারণ হলো এসব মাংসপেশি শরীরের অন্যান্য স্থানের মাংসপেশির তুলনায় খুব ঘনঘন ঢিলে ও সংকুচিত হয়। কোমর ব্যথা বলতে সচরাচর ‘লো ব্যাক পেইন’ বোঝায়।

কোমর ব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হলো মাংসপেশি কিংবা টেনডনে মচকানি। হঠাৎ ভারী জিনিস তুললে এটা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোমর ব্যথার প্রধান কারণ শুধু ভুলভাবে অবস্থান করা অর্থাৎ আপনি যদি বসা, হাঁটা কিংবা দাঁড়ানোর সময় সঠিকভাবে অবস্থান না করেন তাহলে কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এটি কোমর ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

কোমর ব্যথায় নারী

দৈনিক রিকশায় ঘোরা, বাসে বা লোকাল ট্রেনে চড়া কিংবা হঠাৎ ঘুরে যাওয়া কিংবা বাঁকা হওয়া আপনার কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি হাঁচি, কাশি বা ভুল অবস্থানে ঘুমানোর জন্য আপনার কোমরের পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে মারাত্মক ব্যথা ঘটাতে পারে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে উঁচু হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পরা, অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা রোগ এবং গর্ভাবস্থা। গর্ভবতী নারীদের মতো যেসব পুরুষ পেট সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে লাটসাহেবের মতো হাঁটেন, তাঁরাও কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হন। পেছনের দিকে এভাবে অতিরিক্ত বাঁকানোয় মেরুদণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

কোমর ব্যথা

কোমর ব্যথার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো পিএলআইডি বা প্রোল্যাপ্সড লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক। এ ক্ষেত্রে কোমরের মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝখানে ডিস্ক নামে যে তরুণাস্থি থাকে, সেটি পেছনে বা পাশের দিকে বেরিয়ে এসে স্পাইনাল কর্ড বা মেরুমজ্জায় বা এর থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভের গোড়ায় চাপ দিয়ে ব্যথা ও স্নায়বিক দুর্বলতা ঘটায়।

পেশাগত কারণে যাদের কোমর বাঁকা করে কাজ করতে হয় তাদের কোমর ব্যথা হয়, যেমন : ঝাড়ুদার, আবর্জনা সংগ্রহকারী, কুলি ইত্যাদি। যাঁরা কম্পমান মেশিনে দীর্ঘদিন কাজ করেন, তাঁদেরও কোমর ব্যথা বেশি হতে পারে।
মেদবহুল লোকদের কোমর ব্যথা বেশি হয়। অতিরিক্ত ওজন কোমরে চাপ সৃষ্টি করে। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা হয় মাংসপেশির টান টান অবস্থার কারণে। এ ক্ষেত্রে কাজকর্ম, খেলাধুলা, আঘাত ইত্যাদি কারণে মাংসপেশিতে টান পড়ে।

আর পারছি না। অসহ্য কোমর ব্যথা

কোমর ব্যথার আরো উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয়, মেরুদণ্ডের বাত, অস্টিওপরোসিস, অস্টিওম্যালাসিয়া, ইনফেকশন। যেমন : অস্টিওমাইলাইটিস, টিউবার কোলোসিস, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি। জন্মগত কারণ, যেমন : স্কলিওসিস, স্পনডাইলোলিসথেসিস, স্পাইনা বাইফিডা, স্পনডাইলোলাইসিস ইত্যাদি। টিউমার, ক্যানসার, ক্ষয়জনিত সমস্যা, যেমন : অস্টিওআর্থ্রাইটিস, লাম্বার স্পনডাইলোসিস ইত্যাদি। এ ছাড়া মেরুদণ্ড ছাড়া অন্যান্য কারণ, যেমন : বিভিন্ন ধরনের স্ত্রীরোগ, জননাঙ্গ ও মূত্রতন্ত্র সংক্রান্ত রোগ এবং পাক-আন্ত্রিক অবস্থা ইত্যাদি।

একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, কোমর ব্যথা কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়। এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। কারণভেদে উপসর্গের তারতম্য হতে পারে। প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে থাকলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে। কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথা অনেক সময় পায়ের দিকে নামে, পা ভার হয়ে আসে, অবশ ভাব বা ঝিনঝিন অনুভূতিও হতে পারে। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়াতে কষ্ট হয়। কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্তভাব হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। দৈনন্দিন কাজ যেমন পানি তোলা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস, রোগের উপসর্গ, কোমরের সাধারণ এক্স-রে ও সাধারণ রুটিন রক্ত পরীক্ষাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। তবে পাঁচ শতাংশ ক্ষেত্রে এক বা একাধিক পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে মাইলোগ্রাফি, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখলে ব্যথা চলে যায় এবং পরে ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। ব্যথা থাকা অবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় ট্রাকশনের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া বেল্ট ও করসেট ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোমরের ব্যথায় বিভিন্ন ব্যায়াম দেওয়া হয়। এসব ব্যায়াম রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ধাপে ধাপে দেওয়া হয়। রোগীর ব্যথা না কমলে বা অবস্থার অবনতি হতে থাকলে বা প্যারালাইসিসের প্রবণতা দেখা দিলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করতে সঠিক অবস্থানে হাঁটা, চলা, দাঁড়ানো ও বসার অভ্যাস অনুশীলন করলে, কোমরের ব্যায়াম করলে এবং কিছু পরামর্শ মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যায়।

•  ব্যথা নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন।
• শক্ত ও সমান বিছানায় ঘুমাবেন (এ ক্ষেত্রে প্লাইউড হার্ডবোর্ডের ওপর পাতলা তোশক বিছানো যেতে পারে)। সব সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে টানটান হয়ে ঘুমাবেন। কাত হয়ে ঘুমালে হাঁটু ও শরীর সামান্য ভাঁজ করতে পারেন। অতিরিক্ত নরম কিংবা অতিরিক্ত শক্ত বিছানা পরিহার করুন। কখনো উপুড় হয়ে ঘুমাবেন না।
• কখনো ফোমের বিছানায় ঘুমাবেন না এবং ফোমের সোফায় দীর্ঘসময় বসবেন না। নিচু আসনে বসা যাবে না।
• বিছানা থেকে ওঠার সময় একদিকে কাত হয়ে উঠবেন।
• ভারী কোনো জিনিস তুলবেন না বা বহন করবেন না।
• ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না।
• কোনো জিনিস তোলার সময় সোজা হয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসে তারপর তুলবেন।
•  হাঁটার সময় মাথা উঁচু করে, বুক সোজা রেখে এবং পায়ের আঙুল সামনের দিকে রেখে হাঁটবেন। এ সময় আরামদায়ক জুতা বা স্যান্ডেল পরবেন। হাইহিল জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার পরিহার করবেন।
• চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে বসবেন। পিঠ চেয়ারের সঙ্গে লাগিয়ে সোজা হয়ে বসবেন। হাঁটু কোমরের চেয়ে সামান্য উঁচুতে রাখবেন। সামনে ঝুঁকে বসবেন না এবং যথাসম্ভব টেবিলের কাছাকাছি থাকবেন। দীর্ঘসময় বসে থাকবেন না, মাঝে মাঝে সামান্য হাঁটবেন। কখনো পিঁড়িতে বসে কোনো কাজ করবেন না।
• একই স্থানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকবেন না। দাঁড়ানোর সময় এক পা সামনে ভাঁজ করে ও সামান্য উঁচুতে রেখে দাঁড়াবেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে মাঝে মাঝে অবস্থান পরিবর্তন করবেন।
• বেশি ঝাঁকুনি লাগে এ রকম ভ্রমণ করবেন না। যেকোনো ভ্রমণের সময় বিশেষ ধরনের বেল্ট ব্যবহার করুন। যানবাহনে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
• টিউবওয়েল চেপে পানি ওঠাবেন না। কোমরে আঘাত লাগতে পারে,এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
• গোসল করার সময় ঝরনা অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।
• সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন।
• শরীরের ওজন কমাতে হবে।

একুশে সংবাদ/এসএডি
 

Link copied!