গত এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এত বেশি তাপমাত্রাইয় ঝুঁকিতে রয়েছে ওষুধের দোকান। বেশিরভাগ ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহ এবং বেশিরভাগ ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে যেমন ওষুধের কার্যকারিতা হারানোর পাশাপাশি গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ওইসব ওষুধ সেবনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় দুই লাখের মত ফার্মেসি আছে এরমধ্যে মডেল ফার্মেসি আছে প্রায় ৮০০টি। ঢাকাসহ সারাদেশে টিনশেড অনেক দোকানে ওষুধ বিক্রি করা হয়, যেগুলোতে এসি বা রেফ্রিজারেটর কিছুই নেই। স্বাভাবিক সময়েই সেসব দোকানের ওষুধ রাখার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না।
এই তাপপ্রবাহের মধ্যে ওষুধ সংরক্ষণ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ওষুধ সংরক্ষণের কিছু শর্ত আছে। প্রথম হচ্ছে, ওষুধ রাখতে হবে অনার্দ্র, শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ায়। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ এক ধরনের তাপমাত্রায় আবার ইনসুলিনের মতো কিছু ওষুধ আরেক ধরনের তাপমাত্রায় রাখতে হয়। আবার কিছু ওষুধ আছে যেগুলো হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় রাখতে হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওষুধের দোকানগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। এটা না থাকার কারণে গরম ও আর্দ্রতার ফলে বিপুল পরিমাণ ওষুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওষুধ নির্দিষ্ট তাপে না থাকায় দুটো বিষয় হয়। এক হচ্ছে ওষুধের ডিগ্রেডেশন হয়। অর্থাৎ মান কমে যায়। আর কিছু ওষুধ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। সেটা আর ব্যবহার করা যায় না। ধরুন, একটা ওষুধ ৪০০ মি.লিগ্রামের। ডিগ্রেডেশন হয়ে সেটা ৩০০ বা ২০০তে নেমে গেলে। তাহলে এর কার্যক্ষমতা থাকলো না।
তিনি আরও বলেন, ওষুধের দোকানগুলোকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে আনতে না পারি তবে ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।
ওষুধের মান নেমে যাওয়ায় কী কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে লেনিন চৌধুরী বলেন, যে রোগের জন্য ওষধুটি তৈরি করা হয়েছে সেটি ব্যবহারের ফলে নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল না হয়ে দীর্ঘস্থায়ী হলো। এটা প্রথম স্বাস্থ্যঝুঁকি।
লেলিন চৌধুরী বলেন, আরেকটা হচ্ছে, যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেটার ভেতরে যদি পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে শরীরে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কেনো একটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল যেটার মান নেমে গেছে সেটি সেবন করলে অ্যালার্জি হতে পারে। টিকার ক্ষেত্রে যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার কথা সেটা হবে না। ওষুধের মান কমে যাওয়ার ছোটখাটো সমস্যা থেকে শুরু করে লিভার, কিডনি খারাপ হওয়া পর্যন্ত যেতে পারে।
ওষুধ সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের যে কর্তৃপক্ষ আছেন। তাদের র্যান্ডম স্যাম্পলিং করে ওষুধ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
একুশে সংবাদ/এ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :