পৃথিবী থেকে কোটি কিলোমিটার দূরত্ব থেকে ভেসে এল লেজার বার্তা। আর তাতে নানা প্রশ্ন ও রহস্য দানা বেধেছে। এই প্রথম এত দূর থেকে কোনও লেজার বার্তা পৃথিবীতে এসে পৌঁছাল। কিন্তু কে বা কারা পাঠাল এই এই বার্তা? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, যে দূরত্ব থেকে বার্তাটি এসেছে, তা পৃথিবী এবং চাঁদের দূরত্বের ৪০ গুণ বেশি। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘতম পথ অতিক্রম করে আসা লেজার বার্তা বলেও জানিয়েছে নাসা। ১ কোটি ৬০ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে সেই বার্তা আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় পৌঁছেছে।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে তাদের পাঠানো ‘সাইকি’ মহাকাশযানে থাকা একটি যন্ত্রের সাহায্য পুরো বিষয়টি সম্ভব হয়েছে।
‘সাইকি’ মহাকাশযানে ‘ডিপ স্পেস অপটিক্যাল কমিউনিকেশনস (ডিএসওসি)’ নামে এক বিশেষ যন্ত্র রয়েছে। সেই যন্ত্রের সাহায্যেই এই পরীক্ষা করা হয়েছে।
ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে গত ১৩ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেছিল সাইকি মহাকাশযানটি। যাত্রা শুরুর এক মাস পরে ১৪ নভেম্বর সেটি পৃথিবীতে একটি লেজার বার্তা পাঠাতে সফল হয়েছে।
সাইকি মহাকাশযানটি ক্যালিফোর্নিয়ার পালোমার মানমন্দিরে থাকা হেল টেলিস্কোপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। পরীক্ষার সময় ডিএসওসি-র কাছাকাছি ইনফ্রারেড ফোটনগুলি সাইকি থেকে পৃথিবীতে আসতে ৫০ সেকেন্ড সময় নিয়েছিল।
নাসার এক উচ্চপদস্থ কর্তা ট্রুডি কর্টেস জানিয়েছেন, ডিএসওসি-র এত দূর থেকে লেজার বার্তা পাঠানোর বিষয়টি নতুন নজির গড়েছে।
নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির ডিএসওসি-র প্রজেক্ট টেকনোলজিস্ট বলেন, ডিএসওসি থেকে আসা লেজার ফোটন সফল ভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা তথ্যও প্রকাশ করতে পারি। যা বোঝায় যে আমরা মহাকাশের গভীর থেকে ‘আলোর বিট’ বিনিময় করতে পারি।
সাইকি মহাকাশযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল অনন্য ধাতব গ্রহাণু ‘সাইকি’তে পৌঁছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো। গন্তব্যে পৌঁছনোর পথে বার বার পৃথিবীর দিকে লেজ়ার সঙ্কেত পাঠানোর কথা রয়েছে মহাকাশযানটির। মহাকাশযানটি ২০২৯ সালে গ্রহাণুতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাইকি গ্রহাণুটি মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে রয়েছে। ইটালীয় জ্যোতির্বিদ অ্যানিবেলে ডি গ্যাসপারিস ১৮৫২ সালের ১৭ মার্চ এই গ্রহাণু আবিষ্কার করেন।
গ্রিক দেবী ‘সাইকি’র নামে গ্রহাণুটির নামকরণ করা হয়েছে। মহাবিশ্বে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত বড় গ্রহাণুগুলির মধ্যে সাইকি অন্যতম। গ্রহাণুটির গড় ব্যাস প্রায় ২২০ কিলোমিটার।
কিন্তু কেন এই গ্রহাণুর দাম এত বেশি? সাইকি গ্রহাণুর প্রায় সমগ্র অংশ লোহা এবং নিকেল দিয়ে তৈরি। গ্রহাণুটির বেশ কিছু অংশ সোনা দিয়ে তৈরি বলেও দাবি করেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আমেরিকার বর্তমান বাজার অনুযায়ী, ১৬ সাইকির আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন ডলার। যেখানে বিশ্বের অর্থনীতি ৭৪ ট্রিলিয়ন ডলারের।
অর্থাৎ ১৬ সাইকি গ্রহাণুটির মোট মূল্য পৃথিবীর সমস্ত মুদ্রার ১ লক্ষ ৩৫ হাজার গুণ বেশি। এর অর্থ, কোনও দেশ যদি এই বহুমূল্য পাথর দখল করতে সক্ষম হয়, তা হলে বিশ্বের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা থাকবে ওই দেশের।
নাসা মনে করছে, ১৬ সাইকিতে যে লোহা এবং নিকেল রয়েছে, তার ঘনত্ব পৃথিবীতে পাওয়া লোহা এবং নিকেলের ঘনত্বের থেকে বেশি।
১৬ সাইকির দিকে অনেক দিন ধরেই নজর রেখেছে নাসা। এই গ্রহাণুর কাছে অনেক দিন ধরে একটি মহাকাশযান পাঠানোরও পরিকল্পনা করছিল আমেরিকার গবেষণা সংস্থা। অবশেষে অক্টোবর মাসে সেই মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে।
নাসার এক কর্তা বিল নেলসন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, সাইকি অভিযান মানবজাতিকে গ্রহ গঠন সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
বর্তমানে, গভীর মহাকাশ থেকে ‘পেটের মধ্যে থাকা’ যন্ত্রের মাধ্যমে লেজার বার্তা পাঠাচ্ছে মহাকাশযানটি।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :