চীনের পূর্বাঞ্চলের সুনসান নীরব একটি কবরস্থানে সন্তানের কবরের দেখতে এসছিলেন সেকু উ। সেখানে গিয়ে কবরের ওপর ফোন রেখে সন্তানের রেকর্ড করা ভিডিও দেখতে দেখা যায় তাকে। এ ভিডিওতে তার মৃত সন্তান এমন কথা বলছিলেন যা এর আগে কখনও তিনি বলেননি। আর এ কথাগুলোই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে।
ওই ভিডিওতে মৃত জুয়ানমো একটু রোবোটিক কণ্ঠে তার বাবাকে বলেন, আমি জানি তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছো। আমি আর কখনো তোমার পাশে থাকতে পারবো না, তবুও আমার আত্মা এখনো এই পৃথিবীতেই আছে, সারাজীবন তোমার সাথে আছে।
শুধু উ নয়, তার মতো অনেক চীনাই এখন এআই দিয়ে মৃতদের অ্যাভাটার তৈরি করে তাদের শোক ভোলার চেষ্টা করছেন।
তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বাস্তবতা এবং মেটাভার্সকে একত্রিত করতে পারলে আমি আবার আমার ছেলেকে সঙ্গে রাখতে পারব। আমি তাকে প্রশিক্ষণ দিতে পারি... যাতে সে আমাকে দেখে বুঝতে পারে যে আমি তাঁর বাবা।
কিছু চীনা সংস্থা দাবি করেছে যে, তারা মৃত ব্যক্তির ৩০ সেকেন্ডের অডিওভিজ্যুয়াল উপাদান থেকে হাজার হাজার ডিজিটাল মানুষ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে মানুষজন প্রিয়জন হারিয়ে বিধ্বস্ত মানুষগুলোকে স্বস্তি দিতে পারবে।
গত বছর হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যান উয়ের একমাত্র সন্তান ২২ বছর বয়সী জুয়ানমো। এরপর থেকেই ছন্নছাড়া জীবন কাটছিল উ ও তার স্ত্রীর। এ বছর চীনে চ্যাটজিপিটির মতো এআই চ্যাটবটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় উ তার সন্তানকে ডিজিটালি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। এ গবেষণায় তিনি তার সন্তানের ছবি,অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করেন। সেইসঙ্গে এআই ফার্মগুলোতে হাজার হাজার ডলার খরচ করেন।
এখন পর্যন্ত গবেষণার ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে উ তার ছেলের তথ্য সম্বলিত একটি ডাটাবেস তৈরি করার একটি দলও তৈরি করেছেন। উ তার ছেলের চিন্তাভাবনা এবং কথাবার্তার ধরনের সঙ্গে মিল রেখে একটি অ্যাভাটার তৈরির চেষ্টা করছেন, যাতে শক্তিশালী অ্যালগরিদম থাকবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রেও এমন কিছু বিশেষ কোম্পানি বের হয়েছে যারা মৃতদের অ্যাভাটার তৈরি নিয়ে কাজ করছে। তবে চীনে এ শিল্পের প্রসার দ্রুত ঘটছে।
চীনের এআই ফার্ম সুপার ব্রেইনের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং জেওয়েই বলেন, এআই প্রযুক্তিতে চীন বিশ্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চীনে অনেক লোক রয়েছে, যাদের অনেক আবেগি চাহিদা রয়েছে। এটি আমাদের সুবিধা তৈরি করে দিচ্ছে।
ঝাং জানান, তার কোম্পানি এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ ডলারের মধ্যে ২০ দিনে একজন ব্যক্তির প্রাথমিক অ্যাভাটার তৈরি করে দিতে পারে।
চীনের নানজিংভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি সিলিকন ইনটেলিজেন্সের প্রতিষ্ঠাতা সিমা হুয়াপেং বলেন, প্রযুক্তি একটি নতুন ধরনের মানবতাবাদ নিয়ে আসবে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের গবেষক তাল মোর্স বলেন, এআই দিয়ে মৃতদের অ্যাভাটার স্বস্তি দিলে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :