স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর একটা বড় অংশ ইউটিউব ব্যবহার করেন। এই প্ল্যাটফর্মে নানা বিষয়ে ভিডিও উপভোগ করা যায়। দর্শকদের পাশাপাশি বহু মানুষের অর্থ উপার্জনের মাধ্যমও হয়ে উঠেছে ইউটিউব। অনেকেই লাখ লাখ টাকা আয় করছেন প্ল্যাটফর্ম থেকে। বাংলাদেশেও এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্য ছড়ানো নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। আর ভুল তথ্য দিয়ে অধিক মুনাফা করছে ইউটিউব। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের গবেষণা ইউনিট ‘ডিসমিসল্যাব’ ইউটিউবের ভিডিও নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুল তথ্য নিয়ে করা এসব ভিডিও ৫৪১টি চ্যানেল থেকে প্রচারিত হয়েছে। আর এসব ভিডিওর গড় ভিউ ২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ভিডিওতে রয়েছে বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে ৮৩টি রয়েছে ব্যান্ডের। যার এক তৃতীয়াংশ বিদেশি কোম্পানি। আর বাংলাদেশিদের উদ্দেশে এসব বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
গত ১০ জুলাই প্রকাশ করা এই গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রিউমর স্ক্যানার, বুম, নিউজচেকার, ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো, ফ্যাক্ট-ওয়াচ এবং এএফপি ফ্যাক্ট চেকসহ দেশের সাতটি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার ওয়েবসাইটে থেকে প্রকাশিত ২ হাজার ৪২টি নিবন্ধ বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা। যা ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত। এগুলো থেকে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর শিরোনাম সংগ্রহ করে অনুসন্ধান করা হয়। পরে ভুল তথ্যসংবলিত ৭০০টি ভিডিও পান গবেষকেরা।
ভুল তথ্য ও বিষয়বস্তু
- গবেষকদের বিশ্লেষণে দেখা যায় মোট ভিডিওর ৬০ শতাংশ চারটি বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে রাজনীতি, ধর্ম, খেলাধুলা ও দুর্যোগ সম্পর্কিত।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ শতাংশ রাজনীতি। প্রধানত গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভুল তথ্য ছড়ায় বেশি। এগুলো মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য, রাজনৈতিক দলের ও ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব সম্পর্কিত, ২০২৩ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া, সামরিক অভ্যুত্থান এবং ক্ষমতা দখলের গুজব এবং বিভিন্ন পাবলিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুকে ঘিরে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো।
- এছাড়া ১৫ শতাংশ ধর্মসংক্রান্ত। এরপর মূলধারার ইউটিউব চ্যানেলগুলোর বেশিরভাগ খেলাধুলা এবং দুর্যোগ সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে।
এদিকে ৭০০ ভিডিও পর্যালোচনা করে গবেষকরা দেখেতে পান চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ইউটিউব কর্তৃপক্ষ মাত্র ২৫টি ভিডিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বাকিগুলো এখনও সক্রিয়। আর ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়া ভিডিওগুলো পোস্ট করা চ্যানেলগুলোর ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ইউটিউব ভেরিফায়েড।
এছাড়া ভিডিওগুলোতে দেয়া বিজ্ঞাপন থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা আয় করছেন কি না, সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে ভুল তথ্য ব্যবহার করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউটিউব অবশ্যই এখান থেকে মুনাফা করছে বলে জানানো হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।
ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, তারা গবেষণায় বিজ্ঞাপনদাতা ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এভাবে ভুল তথ্যের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোয় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞাপনদাতারা।
সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণায় বলেছে, ইউটিউব জলবায়ুসংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ায় এমন চ্যানেলের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার মুনাফা করছে। গত এপ্রিলে ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশি–বিদেশি সুপরিচিত সংবাদমাধ্যমের নকল চ্যানেল তৈরি করে ভুল তথ্য ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকেও ইউটিউব আয় করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কোন চ্যানেল ইউটিউবে আয় করছে আর কোনগুলো করছে না- সেই তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে ইউটিউব স্বচ্ছ নয়। গত বছরের ১৭ নভেম্বরের আগে কোনো চ্যানেলের মনিটাইজেশন-সংক্রান্ত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। চ্যানেলের সোর্স কোডে গিয়ে দেখা যেত মনিটাইজেশনের মাধ্যমে তারা আয় করছে কি না। কিন্তু ইউটিউব এখন তা দেখায় না।
এতে আরও বলা হয়, ইউটিউবের বাজার বড় কিন্তু সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের নিষ্ক্রিয়তা কম। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে বাংলা ভাষার মানুষের জন্য সুরক্ষানীতি বেশি উপেক্ষিত। এছাড়া প্রযুক্তিগত দায়বদ্ধতাবিষয়ক সংস্থার অভাব, গবেষণা এবং এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার কম আগ্রহ ওই সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :