কিছুদিন আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জামবাহী একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। এ নিয়ে মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাহাজ ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে দুই দেশের সম্ভাবনাময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। এসব কথা বলা হয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়। রুশ জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রদূতকে জানায়, ঢাকার নেওয়া পদক্ষেপ ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে, এমন একটি জাহাজে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম গত ডিসেম্বরে পাঠিয়েছিল রাশিয়া। ইউক্রেন সংকট শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় এই জাহাজটিও আছে। সেটি এখনও বঙ্গোপসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। জাহাজের অবস্থান শনাক্ত-সংক্রান্ত গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইট থেকে মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশে ভিড়তে না পেরে ভারতের বন্দরের দিকে গিয়েছিল সেটি। বর্তমানে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে নোঙর অবস্থায় রয়েছে। জাহাজটি কোথায় যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটের ১৫ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাঝসমুদ্রে নোঙর অবস্থায় ছিল। রুট পরিবর্তন করে চীনের সায়েনথো বন্দরে গন্তব্য সুনির্দিষ্ট করেছিল। গত ৩১ জানুয়ারি চীনের বন্দরটিতে সেটি পৌঁছানোর কথা ছিল। নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, `রাশিয়া আসলে কী করছে, কোনো কিছুই পরিস্কার নয়। দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনোভাবেই সরঞ্জাম খালাস করে তারা এ এলাকা ছাড়তে চায়। ঢাকার রুশ দূতাবাস স্পষ্ট কোনো কথা বলছে না। আমরাও আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করছি না। ঢাকা অবস্থান পরিস্কার করেছে। পরাশক্তির লড়াইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে বলি হবে না বাংলাদেশ। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজ থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করতে দেওয়া হবে না।`
জাহাজটি গত ডিসেম্বরে আসার পর কখনোই বঙ্গোপসাগর ছাড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, “রাশিয়ার এমন আচরণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়। তাদের এত জাহাজ থাকতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজে কেন পণ্য পাঠাতে হলো? এখন এ জাহাজের সামগ্রী খালাস করতে দেওয়া হচ্ছে না দেখে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থের কিস্তি চাইছে রাশিয়া। অর্থ পরিশোধ করা হবে, তবে পরিশোধ করতে নিরাপদ মাধ্যম চায় ঢাকা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যাংকে লেনদেন করা হবে না।”
উরসা মেজর নামের রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, ওই জাহাজটি আসলে উরসা মেজর নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা `স্পার্টা ৩ এ` জাহাজ। রং ও নাম বদল করার পর জাহাজটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। যাচাই করে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞায় থাকা মোট ৬৯ জাহাজের তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই রুশ জাহাজের পণ্য খালাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এক প্রকার সতর্ক করা হয়েছে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে জাহাজের পণ্য খালাস করতে না দিলে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ঢাকাকে ডিসেম্বরে জানিয়েছিল রুশ দূতাবাস।
একুশে সংবাদ/স/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :