বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ দীর্ঘ ৩০ বছর। এর মধ্যে মায়ের সঙ্গে দেখা নেই ছেলের। পরে ৩০ বছর পর সেই মাকে খুঁজে পেয়েছেন ছেলে।
তুর্কি খালেদ আল সুনাইদ (৩৬) বলেন, যখন আমার বয়স চার বছর তখন বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর মায়ের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য মা মিশরে চলে যান। এরপর বাবা মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বাবা আমাকে তার সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর থেকে সুনাইদ তার মায়ের সঙ্গে আর দেখা করতে পারেননি। ১৬ বছর বয়সে সুনাইয়েদের বাবা মারা যান। পরে তিনি তার দাদির কাছে লালিতপালিত হন।
তার দাদি মারা যাওয়ার পর তিনি তার এক নিকট আত্মীয়র কাছে যান। বিয়ে করার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকেন। ২৮ বছর বয়সে সুনাইদ বিয়ে করেন।
বিয়ে করার পর থেকেই সুনাইদের জীবনে পরবর্তন আসে। সে তার মাকে সর্বদা খুঁজে বেড়াতেন। রিয়াদে থাকা মিশরের দূতাবাসে তিনি তার মায়ের খোঁজ নিতেন। কিন্তু তারা তার মায়ের সম্পর্কে কোনো খবর দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সুনাইদ মিশরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সুনাইদের বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদের ৩২ বছর পার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মিশরে কায়রোতে থাকা সৌদি দূতাবাসের সহযোগিতায় সুনাঈদ তার মাকে খুঁজে পায়।
দূতাবাসে ঢুকে তিনি তারা বাবা মায়ের ভ্রমণের কাগজ পত্র খুঁজতে থাকেন। দিনের পর দিন তিনি এ কাজে সময় ব্যয় করেছেন। শেষে মিশর কর্তৃপক্ষ তার এ কাজে সহযোগিতা করে এবং তার মাকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
সুনাইদ বলেন, কায়রোতে সৌদির দূতাবাস আমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হওয়ার পর আমার কথা জানায়। পরে মায়ের সঙ্গে আমার কিছু সময় কথা হয়।
মা আবির হানাফি, যিনি আলেকজান্দ্রিয়াতে বসবাস করেন। তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে তার ছেলের কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি তাকে সৌদিতে আসতে দেননি।
আবির হানাফি বলেন, আমি একের পর এক কল করেছি। কিন্তু আমার কল ধরেনি। পরে কেউ ধরলেও সুনাইদের কথা জানতে চাওয়া হলে বলা হত সুনাইদ মারা গেছে। আমি যেন তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ না করি।
আবির হানাফি আরও বলেন, আমি তাদের অনুরোধ করতাম যে শুধু আমি আমার সন্তানের একটু কণ্ঠ শুনতে চাই। কিন্তু তাও তারা মেনে নেয়নি।
সুনাঈদ বলেন, আত্মীয়দের সহযোগিতায় আমি আমার মায়ের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ তারা জানত আমার মা কোথায় আছে। কিন্তু তারা আমাকে সহযোগিতা করেনি। শেষ পর্যন্ত আমি দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করি।
আমি ভাবতে পারিনি যে মাকে খুঁজে পাব। মাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য সৌদি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাদের সহযোগিতায় মাকে খুঁজে পেয়েছি।
সুনাঈদ বলেন, মাকে রিয়াদে নিয়ে আসা না পর্যন্ত আমি মিশরে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে আসব। আমি তার দুঃখ ভোলানোর চেষ্টা করছি।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :