আটলান্টিকের তলদেশে পর্যটকদের নিয়ে টাইটানিক দেখতে যাওয়া ডুবোযান টাইটান নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাগরের অতলে ডুব দেয়া ডুবোযানটির ছিল না কোনো সনদ।
আটলান্টিক সাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে দুই টুকরো হয়ে পড়ে থাকা বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ দেখার আগ্রহ আছে অনেকেরই। তবে সেই সাধ পূরণে সাগরের অতলে যেতে হলেও গুনতে হয় আড়াই কোটি টাকা।
বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মোটেও ভাবেনি নিউফাউনল্যান্ড ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। সাগরে পর্যটকদের নিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর ডুবোজাহাজটির নানা ত্রুটির কথা সামনে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগরের গভীরে ডুব দিতে হলে যেকোনো সাবমেরিন কিংবা ছোট সাবমারসিবলের বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেগুলো পাস করলে দেয়া হয় নিরাপত্তা সার্টিফিকেট।
তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে সাগরের ডুব দিতে সক্ষম দাবি করা টাইটান সাবমারসিবলের ছিল না কোনো সনদ। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ২০১৯ সালে বিষয়টি স্বীকার করলেও কোন সদুত্তর দেয়নি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। উল্টো চালিয়ে গেছে সব কার্যক্রম।
সাগরের ৪ হাজার মিটার গভীরতায় ডুব দেয়ার সক্ষমতা আছে বিশ্বের মাত্র ১০টি সাবমারসিবলের। টাইটান তাদের মধ্যে একটি হলেও এর কোনো সার্টিফিকেট ছিল না। এই খাতের বিশেষজ্ঞরা আগেই এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এটা খুই বিপজ্জনক।
টাইটানের গভীর সাগরে ডুব দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এর আগের অভিযানে যাওয়া পর্যটকরাও। মেক্সিকান এক পর্যটক নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, টাইটানের মতো ছোট ডুবোযান নিয়ে সাগরের এত গভীরে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক।
সাগরের নিচে যাওয়ার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কিছুক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পরও যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল না হলে অভিযান বাতিল করতে হয়। সেবার সাগরের ১ হাজার মিটার গভীরে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন আমরা অভিযান বাতিল করে উপরে উঠে আসি।
এতসব অভিযোগ থাকার পরেও টাইটানে কোনো নিরপত্তা ত্রুটি নেই বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ওশানগেট। বরং এর সাহায্যে গভীর সাগরে যাওয়াকে নিরাপদ উল্লেখ করেই প্রচারণা চালায় প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (১৮ জুন) ওশানগেটের সাবমারসিবল ডুবোযান টাইটান পাঁচ আরোহী নিয়ে কানাডা উপকূলীয় আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে যায়। এর ঠিক পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে এটিকে খোঁজার সব রকমের চেষ্টা চালায় মার্কিন কোস্টগার্ডের পাশাপাশি কানাডার কোস্টগার্ডের সদস্যরা।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী জাহাজের সমন্বয়ে চলে শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযান। শেষ সময়ে এসে বাড়ানো হয় অভিযানের ব্যাপ্তিও। আটলান্টিকের তলদেশের প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চালানো হয় চূড়ান্ত পর্বের অভিযান। একইসঙ্গে আনা হয় পানির তলদেশে চলাচলে সক্ষম ভিক্টর ৬০০০ নামে রোবোটিক্যালি অপারেটেড ফরাসি ভেহিকেল। যা কিনা ডুবোযানটিকে পানির ওপর ভেসে উঠতে বাধাদানকারী কোনো কিছু শনাক্ত হলে সেটিকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম। এই অনুসন্ধানে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় মার্কিন কোস্টগার্ড।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় তারা।
মার্কিন কোস্টগার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার জানান, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে টাইটান সাবমেরিনের বড় পাঁচটি টুকরা পাওয়া গেছে। সাবমেরিনের সব আরোহীই মারা গেছেন বলে জানান তিনি।
টাইটানে যারা ছিলেন-
প্রাথমিকভাবে ওই সাবমেরিনে থাকা পর্যটকদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও পরে জানা যায়, এটিতে পাইলট এবং একজন ক্রু ছাড়াও আরও তিনজন পর্যটক ছিলেন। পর্যটকদের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী হামিশ হার্ডিং। তিনি একটি অ্যাভিয়েশন ফার্মের মালিক। এর আগে হার্ডিং মহাকাশেও পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করেছেন হামিশ। এই মিশনে যাওয়ার আগে রোববার নিজের ইন্সটাগ্রামে নিজেই সেই খবর দিয়েছিলেন।
এছাড়া সাবমেরিনটিতে পাকিস্তানি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ ছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তার পরিবার জানিয়েছে, তাদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য তারা জানেন না।
একুশে সংবাদ/ন.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :