রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর সদস্যরা বেলারুশে প্রবেশ করেছিলেন আগেই। এবার তারা প্রতিবেশী পোল্যান্ডের সীমান্তের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। এই পরিস্থিতিতে ওয়াগনার বাহিনীর গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পোল্যান্ড।
বস্তুত এই ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারাই ইউক্রেনে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। রোববার (৩০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোলিশ সীমান্তের দিকে বেলারুশে রাশিয়ান ওয়াগনার বাহিনীর গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘১০০ জনেরও বেশি ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্য সুওয়ালকি গ্যাপের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এই এলাকাটি বেলারুশের গ্রোডনো থেকে খুব দূরে নয়।’
আর এটিই সীমান্তের পরিস্থিতিকে ‘আরও ভয়ঙ্কর’ করে তুলেছে। দক্ষিণ পোল্যান্ডের গ্লিউইসে একটি অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনের সময় শনিবার মোরাউইকি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন এবং এ বিষয়ে সতর্ক করেন।
আল জাজিরা বলছে, গ্রোডনো অঞ্চলটি বেলারুশের পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল)। আর সুওয়ালকি গ্যাপ হচ্ছে বেলারুশ এবং রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের বাল্টিক এক্সক্লেভের মধ্যে তাদের ভূখণ্ডে একটি সংকীর্ণ কৌশলগত স্থল করিডোর।
পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সামরিক জোট ন্যাটো উভয়ের সদস্য। রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ এবং ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পোল্যান্ড। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ায় স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহের পরে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যরা বেলারুশে আসার পর থেকে দেশটির এই ভয় আরও বেড়েছে।
আল জাজিরা বলছে, পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত ইতোমধ্যেই কয়েক বছর ধরে উত্তেজনাপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছে। মূলত মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ও অভিবাসী পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ায় পাড়ি দিয়ে ইইউতে প্রবেশ করতে চায়।
এই পরিস্থিতিতে অভিবাসীদের ব্যবহার করে পোল্যান্ড এবং অন্যান্য ইইউ দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার জন্য রাশিয়া ও বেলারুশকে অভিযুক্ত করেছে পোল্যান্ডের সরকার। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি অভিবাসনকে হাইব্রিড যুদ্ধের একটি রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে এবং এই কারণে বেলারুশ সীমান্তে উচু প্রাচীর নির্মাণও করেছে দেশটি।
এর আগে বেলারুশে ওয়াগনার যোদ্ধাদের উপস্থিতি পোলিশ সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে চলতি মাসের শুরুতে পোল্যান্ড তার পূর্ব দিকের সীমান্তে ১ হাজারেরও বেশি সৈন্য পাঠানোর কাজ শুরু করেছিল।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি উল্লেখ করেছেন, চলতি বছর এখন পর্যন্ত বেলারুশ থেকে অভিবাসীরা ১৬ হাজার বার সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘তাদেরকে পোল্যান্ডে ঠেলে দিতে চান’ বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে... খুব সম্ভবত তারা (ওয়াগনার যোদ্ধারা) বেলারুশিয়ান সীমান্তরক্ষীর ছদ্মবেশে থাকবে এবং অবৈধ অভিবাসীদের পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে ঠেলে দিতে (এবং) পোল্যান্ডকে অস্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।’
এর আগে গত শুক্রবার পোল্যান্ডের গভর্নিং পার্টির চেয়ারম্যান জারোস্লো কাকজিনস্কি বলেন, ওয়াগনার যোদ্ধারা ‘মজা করার জন্য বেলারুশে অবস্থান করছেন না’।
কাকজিনস্কি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন ধরনের সংকট তৈরি করতে সেখানে রয়েছেন। আর প্রাথমিকভাবে এর সবই পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে। আর তাই পোল্যান্ডও তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এমনভাবে তৈরি করছে যাতে এই উস্কানি, এই কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়’।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :