AB Bank
ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পুতিনের অবাধ্য হলে যে পরিণতি হয়


Ekushey Sangbad
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৫:৫৪ পিএম, ৩০ আগস্ট, ২০২৩
পুতিনের অবাধ্য হলে যে পরিণতি হয়

ভাগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের পরিণতি সেই সব মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যারা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতার জন্য চরম মাশুল দিয়েছেন। আর কত দ্রুতই না মানুষ তার পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।

 

রাশিয়ায় গত জুনে অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন বিশ্বজুড়ে সমালোচকেরা বিষয়টিকে রুশ নেতার দৃশ্যত যুদ্ধকালীন দুর্বলতা হিসেবে দেখছিলেন। এমনকি কেউ কেউ বলেছিলেন, সংক্ষিপ্ত এ অভ্যুত্থান পুতিন-পরবর্তী যুগের সূচনা করেছে।

 

দুই মাস পর নিজের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন প্রিগোশিন। ২৩ আগস্ট মস্কো থেকে নিজের এলাকা সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে খোলা মাঠে আছড়ে পড়ে। পুতিন নিরাপদে ক্রেমলিনে আছেন। জনসমক্ষে তিনি প্রিগোশিনকে ‘মন্দ ভাগ্যের’ একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘প্রিগোশিন জীবনে অনেক ভুল করেছেন।’

 

পুতিনের রাশিয়ায় এমন একটি শাসনব্যবস্থায় ভাগ্য দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে, যেখানে নেতার অবমাননা ক্ষমা করা হয় না এবং ভুলে যাওয়া হয় না। দুই দশকের বেশি সময় ধরে যে ব্যক্তিদের রুশ নেতার জন্য হুমকি বলে মনে করা হয়েছে, তাঁরা নিয়মিত নিজেদের নির্বাসিত, বন্দী কিংবা মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। দ্রুত তাঁদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

 

প্রিগোশিনের সঙ্গে ভাগনার গ্রুপের বাকি শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের কয়েকজন নিহত হন। অন্যরা তাঁর মৃত্যুর পর ‘নীরব’ হয়ে গেছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের ধারণা, বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি ধ্বংস করা হয়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তাঁদের কয়েকজন বলেছেন, পুতিনই উড়োজাহাজটি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন বলে তাঁরা মনে করেন।

 

পুতিনের রাশিয়ায় এমন একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে নেতার অবমাননা কখনো ক্ষমা করা হয় না। দুই দশকের বেশি সময় ধরে যে ব্যক্তিদের রুশ নেতার জন্য হুমকি বলে মনে করা হয়েছে, তাঁদের কেউ রাশিয়া থেকে নির্বাসিত হয়েছেন, কেউ বন্দী হয়েছেন কিংবা তাঁদের মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। দ্রুত তাঁদের প্রভাব খর্ব করে দেওয়া হয়েছে।

 

এ ধারার শুরুটা হয়েছিল রুশ নেতা পুতিনের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার প্রথম দিকেই। তার উত্থানে ভূমিকা ছিল প্রভাবশালী বরিস বেরেজোভস্কির। পুতিনকে অপমান করায় তাকে পালাতে হয়েছিল। কয়েক বছর ধরে তাকে গণশত্রু হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পুতিনের আনুগত্য না করায় আরেক প্রভাবশালী মিখাইল খোদোরকোভস্কিকে এক দশকের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে।

 

রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কয়েক সদস্যকে সবচেয়ে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, যাঁদের বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করা হয়। পক্ষ ত্যাগ করা রুশ গুপ্তচর আলেকসান্দার লিতভিনেঙ্কো প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন, পুতিন একটি অপরাধ সিন্ডিকেটের মতো রাশিয়াকে চালাচ্ছেন। তাঁকে ২০০৬ সালে বিরল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।

 

পুতিনের জন্য রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে যভরা আবির্ভূত হয়েছেন, তাদেরও ভুগতে হয়েছে। বিরোধী রাজনীতিক বরিস নেমতস্তভকে ২০১৫ সালে ক্রেমলিনের কাছে একটি সেতুর ওপর গুলি করে হত্যা করা হয়। গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিক অ্যালেক্সি নাভালনি কারাগারেই আছেন। স্ক্রিপালকে যে নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল, ২০২০ সালে নাভালনিকেও একই ধরনের গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

 

পুতিন ২৪ জুন প্রিগোশিনকে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ জন্য অভিযুক্ত করে যে মুহূর্তে বক্তব্য দেন, এর পর থেকেই তাঁর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসা একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক ভুল করে এই শব্দ ব্যবহার করেননি। কেজিবিতে বলা হয়ে থাকে, বিশ্বাসঘাতকতা ক্ষমার অযোগ্য।

 

প্রিগোশিন বলেছিলেন, ভাগনার বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল মস্কোর সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাত, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নয়। এরপরও এ বিদ্রোহকে পুতিনের ২৩ বছরের শাসন আমলে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছিল।

 

বিদ্রোহের সময় পুতিন বলেছিলেন, এটা হলো আমাদের দেশ ও জাতির পিঠে ছুরি মারার শামিল। তিনি আরও বলেন, ‘অতি উচ্চাভিলাষ ও ব্যক্তিস্বার্থ বিশ্বাসঘাতকতার দিকে ঠেলে দেয়।’ অবশ্য এ ভাষণ দেওয়ার সময় প্রিগোশিনের নাম উচ্চারণ করেননি পুতিন। সাধারণত কাউকে শত্রু মনে করলে তিনি তার নাম উল্লেখ করেন না। ভাষণে রুশ নেতা কঠিন শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

 

বিদ্রোহ শেষ হওয়ার পরদিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি না, আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ দেখে ফেলেছি।’ পরের মাসে প্রিগোশিন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘তাঁর জায়গায় যদি আমি হতাম, তাহলে আমি কী খাচ্ছি, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতাম।’

 

বিদ্রোহের পরের দুই মাসে প্রিগোশিনের কর্মকাণ্ড ছিল ভুতুড়ে। তিনি রাশিয়ায় গোপনে চলাফেরা করতেন। নিজের বক্তব্য প্রচার থেকেও বিরত থাকেন। আগের বছরগুলোতে তাঁর সগর্ব উত্থানের বিপরীতে অনেকটাই আড়ালে চলে যান প্রিগোশিন।

 

পুতিনও ভাড়াটে বাহিনীর এই প্রধানকে প্রকাশ্যে কৃতিত্ব দেওয়া থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তহবিল পায় ভাগনার। এই বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিপুল অস্ত্রশস্ত্র কেনা হয়েছিল বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়। এ ধনকুবেরের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের লাগাম টেনে ধরারও উদ্যোগ নেয় রুশ কর্তৃপক্ষ।

 

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ওই সপ্তাহেই একটি ভিডিও বক্তব্য প্রচার করেন প্রিগোশিন। এটি ছিল বিদ্রোহের পর প্রথমবারের মতো তাঁর কোনো ভিডিও বার্তা। সামরিক পোশাক গায়ে তাঁর দাবি অনুযায়ী, ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার কোনো এলাকায় ভিডিওটি ধারণ করা। ভিডিওতে তিনি বলেন, রাশিয়াকে সব মহাদেশে সেরা অবস্থানে নিয়ে যেতে এবং আফ্রিকাকে আরও মুক্ত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভাগনারের যোদ্ধারা।

 

প্রিগোশিন তার স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহে রাশিয়ার যে সামরিক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন, তাদের সবাই বিশেষ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ স্বপদে বহাল আছেন। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়ায় নিয়মিতই সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করছেন পুতিন।

 

প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পরদিন পুতিন এক বক্তৃতায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এ যুদ্ধে ভাগনার যোদ্ধাদের অবদান গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। ওই উড়োজাহাজের নিহত আরোহীদের পরিবারের প্রতি ‘গভীর শোক’ জানান। তিনি বলেন, তদন্তের পর জানা যাবে ঠিক কী ঘটেছিল।

 

একুশে সংবাদ/স.হ.প্র/জাহা

Link copied!