গত ২৩ জানুয়ারি আমেরিকার সিয়্যাটল শহরের পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন ২৩ বছর বয়সী ভারতীয় শিক্ষার্থী জাহ্নবী কান্দুলা। সম্প্রতি তার মৃত্যু এক ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে একজনের কণ্ঠ শোনা যায়। কণ্ঠটি বলে উঠে, ‘‘ও তো মারাই গিয়েছে।’’ তার পরেই হাহা করে অট্টহাসি। কণ্ঠটি ফের বলে উঠে, ‘‘না না, ও তো গুরুত্বপূর্ণ কেউ না। ১১ হাজার ডলারের একটা চেক দিয়ে দিক ওকে... মেয়েটার বয়স ২৬। ওর জীবনের আর এমন কি দাম।’’
কণ্ঠটি ছিল আমেরিকার সিয়্যাটল শহরের পুলিশ অফিসার ড্যানিয়েল অডারার। ভারতীয় শিক্ষার্থী জাহ্নবী কান্দুলা সম্পর্কে কথাগুলো বলেছিলেন তিনি।
এ বছরের প্রথম দিকে জানুয়ারি মাসে পুলিশের দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর সম্প্রতি সেদিনের ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের প্রথম দিকে জানুয়ারি মাসে পুলিশের দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছিলেন জাহ্নবী। গাড়ির ধাক্কায় প্রায় একশো ফুট দূরে ছিটকে পড়ে তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের রাস্তা পার হতে যেয়ে মারা যান তিনি।
জানা যায়, গাড়িটির গতি ছিলো ঘণ্টায় ১১৯ কি.মি.। সেই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত সেরে গাড়ি চালিয়ে ফিরতে ফিরতে সিয়াটল পুলিশ অফিসার’স গিল্ডের প্রধান মাইক সোলানের সঙ্গে ফোনে বা ওয়্যারলেসে কথা বলছিলেন ড্যানিয়েল। কিন্তু তখন তিনি জানতেন না, তার শরীরে লাগানো ক্যামেরা (বডিক্যাম) সে সময় চালু ছিল। দুর্ঘটনা নিয়ে সকল কথায় রেকর্ড হয়ে যায় সেই ক্যামেরায়।
সিয়্যাটল পুলিশেরই এক কর্মী এই কথোপকথনের ভিডিওটি দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপর শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। স্বচ্ছতার যুক্তি দিয়ে ভিডিওটি প্রকাশ করে দেয় সিয়্যাটল পুলিশ।
ভিডিওটি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন জাহ্নবীর পরিজন থেকে শুরু করে আমেরিকান রাজনীতিক, অনাবাসী ভারতীয়রাসহ অজস্র সাধারণ মানুষ। সান ফ্রান্সিসকোর ভারতীয় দূতাবাস এক্স হ্যান্ডলে লেখে, ‘আমরা যথেষ্ট কড়াভাবে বিষয়টি সিয়্যাটলের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং ওয়াশিংটনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানিয়েছি।’
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিংহ সান্ধু আমেরিকান প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে পদক্ষেপের দাবি জানান। জো বাইডেন প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ভারতকে।
এই ডিসেম্বরেই নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার কথা ছিল জাহ্নবীর।
সিয়্যাটল পুলিশ বলেছে, আপৎকালীন ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে তীব্র গতিতে ওই গাড়িটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের অফিসার কেভিন ডেভ। আচমকা জাহ্নবীকে সামনে দেখে ব্রেক কষেও সংঘর্ষ এড়াতে পারেননি কেভিন।
কেভিন ওই সময়ে অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পড়েছিল পুলিশ অফিসার’স গিল্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েলের ওপরে।
ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পরে এক বিবৃতিতে পরিবার বলেছে, ‘প্রতিটি জীবন অমূল্য। বিশেষত এমন শোকের সময়ে জীবনকে কখনও খাটো করে দেখা উচিত নয়।’
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :