কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে অভিযোগ ওঠার পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নেমে এসেছে। এবার তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যতেও। বিরোধ শুরুর পর থেকে ভারতে কানাডার ডাল রপ্তানি কমেছে ব্যাপকভাবে।
ফলে ভারতীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুই দেশের শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
গত জুনে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন খালিস্তানি আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। এই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, হরদীপ সিং হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা।
কানাডা সরকারের এই অভিযোগকে ‘মনগড়া’ এবং ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ধরনের ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থিদের ওপর থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা মাত্র।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার হাউজ অব কমন্সের সভায় ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন জাস্টিন ট্রুডো। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে তীব্র টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্য। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো দেশই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়নি।
ভারতীয় ডাল ও শস্য অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিমল কোঠারি জানান, ভারতে বছরে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন ডালের চাহিদা থাকে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ১৬ লাখ টন।
বাকিটা কানাডা থেকে আমদানি করতে হয়। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কানাডা থেকে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করেছে ভারত, যার দাম প্রায় ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার। দেশটির মোট ডাল আমদানির প্রায় অর্ধেকই এসেছে কানাডা থেকে।
এ বছর ভারতে ডাল উৎপাদন খুব একটা ভালো হয়নি। এতে এমনিতেই স্থানীয় বাজারে দাম বেশ চড়া। তার ওপর কানাডা থেকে আমদানি কমে গেলে ভারতীয় বাজারে ডালের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। আর আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে খাদ্যমূল্য বেড়ে গেলে তা রাজনৈতিকভাবেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছর গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারত। এ বছরও সব ধরনের অ-বাসমতি চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে তারা।
ওলাম এগ্রি ইন্ডিয়া নামে একটি আমদানিকারক সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্ত বলেছেন, শিল্প কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, বর্তমান উত্তেজনার কারণে দুই দেশ বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
কানাডীয় শস্য রপ্তানিকারক প্যারিশ অ্যান্ড হেইমবেকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কেভিন প্রাইস জানিয়েছেন, এ বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ ডাল আমদানির অর্ডার দিয়েছিল। সেগুলো বাতিল হওয়ার কোনো খবর না থাকলেও শেষ পর্যন্ত রপ্তানি হবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কানাডীয় ব্যবসায়ীরা।
অবশ্য কানাডার আরেক রপ্তানিকারক বলেছেন, ভারতীয় ক্রেতারা দ্বিধায় থাকলেও বিশ্বব্যাপী কানাডীয় ডালের চাহিদা আগের মতোই শক্তিশালী রয়েছে।
মুম্বাই-ভিত্তিক এক ডিলার জানিয়েছেন, ভারতীয় আমদানিকারকরা এখন কানাডা থেকে ডাল কেনা কমিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঝুঁকছেন।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :