ইসরায়েলে প্রায় ১২ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছে। তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিরা এখন ইসরায়েলের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ যেকোনও সময়ে তারা কর্মচ্যুত হতে পারেন। এমনকি এরই মধ্যে অনেককেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা শুরু করেছে দেশটি। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে দুই বছর ধরে চাকরি করেন নোরা (ছদ্মনাম)। তিনি একজন ফিলিস্তিনি। গত ৭ অক্টোবর নিজের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পর জানতে পারেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি তার সহকর্মীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এর পরদিন নোরাকে ম্যানেজারের অফিসে তলব করা হয় এবং বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনার আর অফিসে আসার দরকার নেই।
আল জাজিরাকে নোরা জানান, ‘আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এটি আমার সঙ্গে ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে বৈষম্যমূলক আচরণ। আমি ভাবতেই পারি না, কেউ একজন হঠাৎ করে বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে যাবে।’
নোরা আরো জানান, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, হামাসকে সমর্থন করার মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ জন্য তাঁর চাকরির ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হলো। আল জাজিরা জানিয়েছে, ওই চিঠির একটি প্রতিলিপি তাদের কাছে রয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে ওই কর্মীর ছদ্মনাম হিসেবে নোরা ব্যবহার করা হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, শুধু নোরা একা নন। গত কয়েক দিনে তারা এ রকম বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন, যাঁদেরকে কর্মক্ষেত্র থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তাঁরা ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
ইসরায়েলের আরব সংখ্যালঘুদের আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘আদালাহ’–এর পরিচালক হাসান জাবারিন বলেন, কোনও কোনও কর্মী তিন–চার–পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন। তারা এখন চাকরিচ্যুত হওয়ার চিঠি পাচ্ছেন। চিঠিতে বলা হচ্ছে, শুনানি হবে। কিন্তু কবে শুনানি হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। শুধু মত প্রকাশের জন্য এ ধরনের অন্যায়ের শিকার হওয়াটা দুঃখজনক।
আদালাহ জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো থেকে অন্তত ৪০জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে যে তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিল।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নাজারেথের আরব ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পরিচালক ওয়েহবে বাদারনি বলেন, তারা ৩৫জনের কাছ থেকে একই ধরনের অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগকারীরা বিভিন্ন হাসপাতাল হোটেল, গ্যাস স্টেশন, রেস্তোরাঁ এবং কলসেন্টারে কাজ করেন। তাদের বিরুদ্ধেও ‘সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন স্বাস্থ্যকর্মী আল জাজিরাকে বলেন, ‘শুধু ফিলিস্তিনি হওয়ার কারণে আমাকে প্রতিদিন লাঞ্চনা ও বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমি প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে অফিসে যাই। যেকোনো সময় চাকরি চলে যাওয়ার আতঙ্কে থাকি।’
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :