ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় চিরবিদায় নিয়েছেন ফিলিস্তিনের উদীয়মান ঔপন্যাসিক ও কবি হিবা আবু নাদা। চলমান সংঘাতের মধ্যে গত ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নিজ বাড়িতে প্রাণ হারান ৩২ বছর বয়সী এই লেখক।
হিবা আবু নাদার প্রথম উপন্যাস ‘দার দিওয়ান’ বা ‘মৃতের জন্য অক্সিজেন নয়’ তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। এই উপন্যাসের জন্য ২০১৭ সালে তাকে দেয়া হয় মধ্যপ্রাচ্যের সম্মানজনক সৃজনশীল দশারজা পদকদ।
১৯৯১ সালে সৌদি আরবের মক্কায় জন্মেছিলেন নাদা। গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে সম্মান ডিগ্রি এবং ক্লিনিকেল নিউট্রিশনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রভাবশালী কবি হয়ে উঠেছিলেন।
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া বার্তায় হিবা আবু নাদার মৃত্যুর খবরটি প্রকাশ করেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সুইডিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদালহাদি আলিজা। নাদা সর্বশেষ টুইট করেছিলেন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পরদিন গত ৮ অক্টোবর রাতে।
গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বর্বরতার সেই রাতে নিজের মাতৃভাষায় হিবা লিখেছিলেন ‘যদি আমরা হামলায় মৃত্যুও হয়ে থাকে তবে জেনে রাখুন যে আমরা আত্মসন্তুষ্ট এবং সত্যে অবিচল ছিলাম, এবং আমাদের পক্ষ থেকে জেনে নিও যে আমরা সত্যের অনুসারী মানুষ। গাজায় রাতগুলো রকেটের ঝলকানি ছাড়া এখন অন্ধকার, বোমার আওয়াজ ছাড়া অনেক নীরব, প্রার্থনার প্রশান্তি ছাড়া ভয়ঙ্কর, এবং শহীদদের নূর ছাড়া কালো আর অন্ধকার। শুভ রাত্রি, গাজা।’
হিবার মৃত্যুর পরে বার বার কেঁদে উঠছে ফিলিস্তিনিদের হৃদয়। তার কবিতা, শেষ টুইট বার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। হিবার লেখা কবিতা উচ্চারিত হচ্ছে শোকার্ত গাজাবাসীর কণ্ঠে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তাকে নিয়ে চলছে শোকের মাতম। অনেকেই পোস্ট করছেন তার লেখা কবিতা। মৃত্যুর পর তার ভাইরাল হওয়া একটি কবিতার লাইনগুলো...
‘আমরা এখন সপ্তম স্বর্গে
সেখানে গড়ে উঠেছে নতুন এক শহর।
রক্তাক্ত কাপড়ে এখানে চিৎকার করছে রোগী আর চিকিৎসকেরা।
শিক্ষকেরা শিশুদের ওপর আর রাগছে না,
পরিবারগুলোরও নেই কোনো দুঃখ, নেই ব্যথা।
ক্যামেরায় স্বর্গের ফটো তুলছে রিপোর্টাররা।
আর কবিরা, যারা অমর প্রেমের গান গায়—
সবাই গাজার বাসিন্দা।
স্বর্গে আরেক গাজা বানাচ্ছে তারা
যে গাজায় নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা।’
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :