বিদ্রোহী জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর হামলায় একের পর এক এলাকা হাতছাড়া হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাদের। প্রাণ বাঁচাতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাই ভারতে ঢুকে পড়ছে তারাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মিজোরামে ঢুকে পড়েছেন অন্তত ৫,০০০ মিয়ানমারের নাগরিক। মিজোরাম পুলিশ জানিয়েছে, সেই দলে রয়েছেন ৩৯ জন সেনা সদস্যও। এ খবর দিয়েছে আনন্দবাজার।
মিজােরাম পুলিশের আইজি লালবিয়াকথাঙ্গা খিয়াংটে মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ‘মিজোরামের চাম্পেই জেলা লাগোয়া সীমান্তের অদূরে মিয়ানমারের সেনার রিখাওদর এবং খাওমাওয়ি ছাউনি দু’টি সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বাহিনী দখল করে। প্রাণভয়ে ৩৯ জন মিয়ানমার সেনা জোকাওথান সীমান্ত চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা দেশটিতে আশ্রয় চেয়েছেন।’
লালবিয়াকথাঙ্গা জানান, সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামেরও দখল নিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী। তাই মিয়ানমারের প্রায় ৫,০০০ গ্রামবাসী আতঙ্কে ভারতে চলে এসেছেন।
মিজোরাম পুলিশ সূত্রের খবর, বিদ্রোহীদের গুলিতে আহত কয়েক জন গ্রামবাসীকে চাম্পেই জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাদের মধ্যে এক জনের মৃত্যুও হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অক্টোবরে মধ্যপর্বে মিয়ানমারের তিনটি বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী- ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নতুন জোট সে দেশের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে গিয়েছে। মিয়ানমার-চিন সংযোগরক্ষাকারী প্রধান সড়কও বিদ্রোহীদের দখলে চলে গিয়েছে। এবার লড়াই বেধেছে পশ্চিমের চিন প্রদেশে।
গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে মায়ানমারের লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া হয়েছেন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে। এক দশক আগের রোহিঙ্গা বিতাড়ন পরিস্থিতির পরে তাই মিয়ানমারের বর্তমান গৃহযুদ্ধ নতুন করে ‘শরণার্থী সমস্যা’ তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আড়াই বছরের সেনা সরকার এই প্রথম এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হল বলে মনে করা হচ্ছে।
মায়ানমারের ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’ (এসএসি)-এর প্রেসিডেন্ট মিয়ন্ত শোয়ে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘দ্রুত, কার্যকরী পদক্ষেপ না-করলে আমাদের দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।’
পরিস্থিতি কার্যত সেই দিকেই এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :