ক্ষমতায় আসার পরেই পূর্বপ্রতিশ্রুতি মতো কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। ভারতের প্রতিবেশি দেশে ক্ষমতার এই পালাবদল ভারতের জন্য খুব একটা স্বস্তির হয়নি। পালাবদলের পরেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দুই দেশের সম্পর্কে। মালদ্বীপের মাটি থেকে সেনা সরিয়ে দিতে ভারতকে অনুরোধ করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
কথা হচ্ছে মলদ্বীপকে নিয়ে। সেখানে সদ্য ক্ষমতায় এসেছেন মহম্মদ মুইজু। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই দ্বীপরাষ্ট্র তার পরেই ভারতকে সেনা সরানোর কথা বলেছে।
গত রোববার মুইজু জানিয়েছেন, তার অনুরোধে ভারত সাড়া দিয়েছে। মালদ্বীপ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে নয়াদিল্লি। একইসঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটার বার্তাও দিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট।
মুইজু জানিয়েছেন, মালদ্বীপে ভারতের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে।
মুইজুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মলদ্বীপে গিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। নিজের দফতরে বসে তাকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট।
মালদ্বীপে ভারতের ৭৫ জন সেনা জওয়ান রয়েছেন। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে নজরদারির কাজে সে দেশের স্থলসেনা এবং বায়ুসেনাকে সহায়তা করে থাকেন ওই জওয়ানেরা। দেশটির অর্থনৈতিক অঞ্চলের চারপাশে টহল দেয় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ।
এছাড়া, মালদ্বীপে মোতায়েন রয়েছে ভারতের বেশ কিছু কপ্টার। সেগুলি মালদ্বীপের নাগরিকদের নির্জন দ্বীপ থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মলদ্বীপে ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুইজু। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি আবার ছিলেন কিছুটা ভারতঘেঁষা। যা নিয়ে সোলিকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি মুইজু। তার অভিযোগ, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতীয় সেনাকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিয়েছেন সোলি।
ক্ষমতায় এলে মালদ্বীপ থেকে বিদেশি সেনা সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার পরেই তার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন।
একটি সাক্ষাৎকারে মুইজু জানান, মালদ্বীপে দীর্ঘ দিন ধরেই ভারতের সেনা রয়েছে। কিন্তু দেশের ‘সার্বভৌমত্বে’র কথা মাথায় রেখে ওই সেনাদের মালদ্বীপ ছাড়তে বলেছেন তিনি। অন্য কোনও দেশের সেনা থাকলেও তিনি একই কথা বলতেন বলে জানান।
অনেকে মনে করছেন, চিনপন্থী শাসক মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরিয়ে এবার চিনের দিকে ঘেঁষবেন। হয়তো মালদ্বীপে নিয়ে আসা হবে চিনা সৈনিকদের। ফলে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপরাষ্ট্রে চিনের সেনা ঢুকে পড়তে পারে অচিরেই। সে ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে নয়াদিল্লি। কারণ শ্রীলঙ্কাতেও চিনের আধিপত্য বাড়তে শুরু করেছে।
ভারত মহাসাগরে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি শ্রীলঙ্কা। সেখানে চিনা সংস্থা সিনোপেক সম্প্রতি তেলের বাণিজ্যের বড় বরাদ্দ পেয়েছে। ফলে সেখানেও ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করছে বেইজিং।
এই পরিস্থিতিতে মালদ্বীপে চিনপন্থী শাসক ভারতের পক্ষে নতুন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও মুইজু গত অক্টোবরেই জানিয়েছিলেন, মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরিয়ে চিনের সেনাকে ঢোকানোর কোনও পরিকল্পনা তার নেই।
মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরে যাওয়ার পর চিনা সৈনিকদের যদি সেখানে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়, তবে ভারত মহাসাগরের আঞ্চলিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। মুইজু নিজেও তা স্বীকার করেছিলেন।
মুইজুর উপরেই এখন ওই এলাকার শান্তি এবং নিরাপত্তা নির্ভর করে আছে, মত বিশেষজ্ঞদের। তিনি কোন দিকে ঝুঁকবেন, কার কথা শুনবেন, কাকে কী ভাবে সুযোগ দেবেন, সে দিকে নজর রয়েছে বিশ্বের। সূত্র : আনন্দবাজার
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :