গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের লাগাতার প্রচেষ্টায় কোনো বিরতি থাকবে না বলে ঘোষণা করেছেন বৈশ্বিক এ সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রোববার এক বিবৃতিতে গুতেরেস জানান, জাতিসংঘের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে এই ইস্যুতে কখনো হাল ছাড়বেন না তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য আমি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এটা খুবই দুঃখজনক যে নিরাপত্তা পরিষদ সেই অনুরোধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।’
‘তবে তাই বলে যে সেখানে যুদ্ধবিরতির আবেদন ফুরিয়ে গেছে— এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি কখনো হাল ছাড়ব না।’
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক মাত্রায় বিধ্বংসী যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে গত ২৫ নভেম্বর গাজায় চার দিনের অস্থায়ী মানবিক বিরতি ঘোষণা করে হামাস ও ইসরায়েল। পরে তা আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়। এই সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৯৪ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তার বিনিময়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৫০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে পরিষদের অন্যতম অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু প্রস্তাবটির ওপর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ভোটপর্ব শেষে দেখা যায়, পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টি পক্ষে সমর্থন দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সমর্থন দেয়নি।
উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি বা ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্র মিশনের কর্মকর্তা ও উপ রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড এটিকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ উল্লেখ করে বলেন, এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি দেওয়া হলে সেটি সেখানে পরবর্তী যুদ্ধের বীজ বপন করবে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় ইসরায়েলের স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি।
অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটছে, তা এখনো অজানা।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :