ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে একবার এএফপির এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি যে সবসময় সঙ্গে পিস্তল রাখেন সেটা ব্যবহার করেন কিনা? নাকি রুশ বাহিনী যদি তাকে আটক করে তবে আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে সঙ্গে পিস্তল রাখেন? জবাবে জেলেনস্কি বলেছিলেন, `না, না, না। এটা আমার নিজেকে গুলি করার জন্য নয়। নিশ্চিতভাবেই, এটা গুলি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। `
রাশিয়া –ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমারা দৃশ্যত সেরকম সাহায্য না করায় এখন কিছুটা হতাশই জেলেনস্কি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, জেলেনস্কির পরাজয় শিগগিরই।
এমন পরিস্থিতিতে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ে অধ্যাপক স্টেফান উলফ ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ওদেসা ল একাডেমির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক জেন মনেত যৌথভাবে একটি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, জেলেনস্কির অবস্থান খারাপের দিকে। গত রোববার ( ৪ ফেব্রয়ারি) প্রকাশিত সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সোসাইটি ( সিএনএএস) জার্নাল।
এ জার্নালে দুই রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেখান ,পশ্চিমা সমর্থন অব্যাহত থাকা নিয়ে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি যখন সৃষ্টি হয়েছে, তখন দেশের ভেতরে জেলেনস্কির অবস্থানও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জেলেনস্কির অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতি তিনি উচ্ছেদ করবেন। কিন্তু তার সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের দুর্নীতি সেই প্রতিশ্রুতির ওপর জোর আঘাত হানল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে শক্তিশালী করেছেন। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য দমন-পীড়ন হচ্ছে।
বর্তমান কেলেঙ্কারি ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিভাজনকেই গভীর করবে। যুদ্ধকৌশল নিয়ে বিভেদ সৃষ্টিকারী বিতর্ক যখন তুঙ্গে এবং এ বিষয়ে ইউক্রেনের সামরিক নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যকার মতবিরোধের বিষয়টি যখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনিকে বাদ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিশেষ দুটি সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে সিএনএন। তবে সেনাপ্রধানকে বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি জেলেনস্কির প্রশাসন। তাই জালুঝনিকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
সিএনএন জানিয়েছে, গত সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে সেনাপ্রধান জালুঝনির সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। এই বৈঠকে তাকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ফলে জালুঝনি এখনো সেনাপ্রধানের পদে রয়েছেন। কিন্তু এখনই ঘোষণা না এলেও চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জেলেনস্কি প্রেসিডেনশিয়াল ডিক্রি জারি করতে পারেন।
জালুঝনি ইউক্রেনের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। এমনকি জনমত জরিপে জেলেনস্কির চেয়েও এগিয়ে তিনি। গত ডিসেম্বরে কিয়েভ ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ ইউক্রেনীয় নাগরিক জালুঝনিকে সমর্থন করেন। অন্যদিকে জেলেনস্কিকে সমর্থন করেন মাত্র ৬২ শতাংশ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জেলেনেস্কির সিদ্ধান্ত কতোটা সঠিক এ নিয়ে ভাবছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে জানা গেছে, বিশেষ বৈঠকে শান্তভাবে জেলেনস্কি জালুঝনিকে সেনাবাহিনীর অন্য পদ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। তবে জালুঝনি সেই প্রস্তাবে সায় দেননি। এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে সিএনএন। তারাও কোনো মন্তব্য করেনি।
জেলেনস্কি তাঁর সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনিকে বরখাস্ত করবেন কি না কিংবা সেই ক্ষমতা তাঁর আছে কি না, সেটা একদমই পরিষ্কার নয়। বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর সেনাপ্রধানকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। কিন্তু জালুঝনি সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জেলেনস্কি ও জালুঝনির মধ্যে সম্পর্ক সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিক্ত হয়ে উঠেছে।
ইউক্রেনের ভেতরে নিজেদের মধ্যেই অবস্থা ভালো না। রুশ বাহিনী না জেলেনস্কি ঘরের মধ্যেই নিরাপদ কি না এ প্রশ্ন এখন আলোচিত হচ্ছে। জেলেনস্কি সঙ্গে রাখা প্রিয় পিস্তল কি ব্যবহার করবেন নাকি করতে হবে না সেটাই দেখার বিষয়।
একুশে সংবাদ/ন.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :