দেশজুড়ে বিদ্রোহীদের প্রবল আক্রমণে একের পর এক শহর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা মিয়ানমার জান্তা। এখন নিজের মসনদ টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করছেন জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। এমন অস্থিরতার মধ্যে জান্তাবিরোধী দুই যোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহতদের বয়স ২০–এর কোঠায়। ম্যাগওয়ে অঞ্চলের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তিন মাস আগের হলেও গত মঙ্গলবার এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে বলে বুধবার ইরাবতীর খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স (ওয়াইডিএফ) বলেছে, জান্তা সৈন্য ও মিত্র পি সু হুতি মিলিশিয়া সদস্যরা গাঙ্গাও টাউনশিপের মায়াউক খিন ইয়ান গ্রামে অপরাধের জন্য দায়ী।
ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন ব্যক্তিকে দিয়ে জোর করে বলাতে বাধ্য করা হয়, তারা স্থানীয় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সদস্য। এমনকি জান্তা বাহিনীর চাপের মুখে তারা নিজেদের ‘কুকুর’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে বাধ্য হন। এরপর তাঁদের গাছের ডালে ঝোলানো হয়। ভিডিওতে ঘটনার সময় ওই দু’জনকে ঘিরে থাকা লোকজনের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন নির্ধারিত পোশাকে আর অন্যরা সাধারণ পোশাকে।
উল্লেখ্য, জান্তা বাহিনীকে বোঝাতে বেসামরিক লোকজন অনেক সময় ক্ষোভ থেকে ‘সামরিক বাহিনীর সদস্যকে কুকুর’ বলে সম্বোধন করেন।
জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার আগে তাদের নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। তাদের সারা গায়ে ক্ষত ও রক্তের দাগ ছিল। তাদের হাত–পা লোহার চেইন দিয়ে বেঁধে হেঁচড়ে নিয়ে গাছে ঝোলানো হয়।
ওয়াইডিএফের ভাষ্য, এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হতে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন করে সেখানে লোক পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে ইরাবতী এই তথ্যের সত্যতা নিজেরা যাচাই করতে পারেনি। ভিডিওটির ধারাবিবরণীতে যার কণ্ঠে ছিল, তাতে আনন্দ ঝরছিল। সেখানে এই অপরাধকে ‘বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ওয়াইডিএফ দাবি করেন, নিহত দু’জন তাদের সদস্য। তারা হলেন ফো তে ও থার হাতুং। ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর মিয়াউক খিন ইয়ান গ্রামে একটি অভিযানের সময় জান্তা সেনা এবং পিউ সো হতি সদস্যরা এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক আইনপ্রণেতা ‘বুলেট’খ্যাত হ্লা সোয়ের নির্দেশনায় গ্রামটি পিউ সো হতি মিলিশিয়ারা নিয়ন্ত্রণ করে। মিলিশিয়ারা এই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে নির্বিচার গোলাবর্ষণসহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর জন্য কুখ্যাত। ২০২২ সালের মার্চ মাসেও গ্রামটিতে দুই বেসামরিক নাগরিককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। গ্রামটিতে মিলিশিয়াদের আধিপত্য বাড়ার কারণে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ভিডিওটি দেখে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। এ ধরনের অমানবিকতা আতঙ্ক ছড়ানোর পরিবর্তে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিপ্লবী চেতনাকেই আরও শক্তিশালী করবে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এক বিবৃতিতে ওয়াইডিএফ বলে, ‘সন্ত্রাসী সামরিক বাহিনী অনেক আগে থেকেই অমানবিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সামরিক শাসনের মূলোৎপাটন করা এবং বিপ্লবের সাফল্য নিশ্চিত করা।’ বিবৃতিতে সংগঠনটি জনগণকে নির্মম না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বিপ্লব সফল না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
একুশে সংবাদ/স.ল.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :