ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ ছিনতাই করেছে সোমালিয়ার জলসদস্যুরা।আর এর পর থেকেই আলোচনায় এসেছে সোমালিয়ার জলসদস্যুরা। এই দস্যুরা হঠাৎ কেন তৎপর হয়ে উঠল, তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। তারা কীভাবে জাহাজ ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে সেটি নিয়েও কৌতূহল রয়েছে অনেকের।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের জাহাজ জিম্মি করার প্রক্রিয়া বেশ সোজাসাপটা হলেও, পরিস্থিতি ভেদে তা জটিল হতে পারে।
বিনিয়োগকারী পাওয়ার পর জলদস্যুরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়। একটি দল জিম্মি করার মতো জাহাজ খুঁজতে ইঞ্জন-চালিত নৌকা নিয়ে সাগরে ভেসে বেড়ায়। জাহাজ খুঁজে পেলে, অন্ধকারের মধ্যে সেটার পাশে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং এরপর গুলি ছুড়তে ছুড়তে জাহাজের ডেকে ওঠার চেষ্টা করে তারা। সফল হলে পরে সেই জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যায় এই দল।
এরপর মাঠে নামে আরেকটি দল। মুক্তিপণের আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা জাহাজ পাহারা দেয়। মুক্তিপণের অর্থ পাওয়ার পরই তারা জাহাজ ছেড়ে যায়। এর মধ্যে দৃশ্যপটে আসে ব্যবসায়ী। নোঙর করা জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের খাওয়ানোসহ যাবতীয় খরচ বহন করে সে। পরে মুক্তিপণের ভাগ থেকে খরচ করা অর্থ সুদসহ ফেরত পায় সে।
জানা গেছে, যারা জাহাজ পাহারা দেয়, তারা একেকজন কমপক্ষে ১৫ হাজার ডলার পায়। মূল বিনিয়োগকারী নেয় মুক্তিপণের ৩০ শতাংশ। বাকি বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ শেয়ার অনুযায়ী ভাগ পায়। ‘অ্যাংকরিং রাইট’ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় পায় একটা ভাগ। এরপর যা থাকে, সেটা বাকি জলদস্যুরা ভাগ করে নেয়।
এদিকে, বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললেও, দস্যুদের পক্ষ থেকে এখনো যোগাযোগ না করায় এগোয়নি নাবিকদের উদ্ধারের আলোচনা। এর মধ্যেই ২৩ নাবিকসহ জাহাজটিকে তার সবশেষ অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে নতুন জায়গায় নোঙর করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর (ইইউ নেভি) সবশেষ তথ্য বলছে, সোমালিয়ার তিনটি জায়গায় এই জলদস্যুদের আস্তানা আছে। সেসব জায়গা থেকে জাহাজ ছিনতাইয়ের কর্মকাণ্ডে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়। সোমালিয়া উপকূলের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে আস্তানাগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।
গেল বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সবশেষ হালনাগাদ তথ্যে ইইউ নেভি জানায়, এমভি আবদুল্লার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে এবং ২৩ নাবিকের সবাই নিরাপদে আছেন। ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তায় ‘সবচেয়ে কার্যকর’ পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ ও সোমালি কর্তৃপক্ষসহ সব অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে অপারেশন আটলান্টা।
বাংলাদেশি ওই জাহাজে কীভাবে হামলা চালানো হয়েছে, সে বিষয়েও তথ্য দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী। তারা বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে ‘এমভি রুয়েন’ নামে মাল্টিজ-পতাকাবাহী একটি বাল্ক কার্গো জাহাজ আটক করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। সোমালিয়া উপকূল থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী যে পণ্যবাহী জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে; এই কাজে তারা (দস্যুরা) রুয়েনকে ব্যবহার করে থাকতে পারে।
তবে বিশেষ কমান্ডো অভিযান চালিয়ে অবশেষে মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন নামের ওই জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে দখলে নিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী, উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ নাবিককে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :