ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এই মুহূর্তে জনবহুল শহর রাফাহ। ইসরায়েলি সেনাদের টানা পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান হামলা ও অভিযানে বিপর্যন্ত উপত্যকাটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুদ্ধপীড়িত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছেন শহরটিতে। গাজার জনবহুল এ অংশটিতে হামলার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে রাফাহতে হামলার অনুমতিও দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
তবে এই হামলার ব্যাপারে এবার আপত্তি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাফাহতে হামলা ভুল পদক্ষেপ হবে বলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত এক মাসে প্রথমবারের মতো সোমবার ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেখানে নেতানিয়াহুকে বাইডেন বলেছেন, গাজার রাফাহতে বড় আকারের স্থল আক্রমণ চালানো হবে একটি ভুল।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েলের রাফাহ আক্রমণের পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য ‘বিকল্প পদ্ধতি’ নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য বাইডেনের অনুরোধে সম্মত হয়েছেন নেতানিয়াহু।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ফোনে কথা বলেছিলেন বাইডেন ও নেতানিয়াহু। আর এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা এবং গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে জাতিসংঘের সতর্কতা এবং অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সমালোচনায় ক্রমশ সোচ্চার হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এমনকি নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ক্ষতি করছেন বলেও চলতি মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্তব্য করেন জো বাইডেন।
এদিকে বাইডেন রাফাহতে ইসরায়েলের বড় পরিসরের সামরিক অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন বলে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।
সুলিভান বলেন, ‘সেখানে বড় আকারের স্থল অভিযান পরিচালনা করা হলে তা হবে একটি ভুল, এটি আরও নিরীহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটাবে। ইতোমধ্যেই বিরাজমান ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে, গাজায় নৈরাজ্যকে আরও গভীরে নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে।’
বাইডেন নেতানিয়াহুকে ওয়াশিংটনে সামরিক, গোয়েন্দা ও সাহায্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সিনিয়র দলও পাঠাতে বলেছেন। নেতানিয়াহু এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন জানিয়ে সুলিভান বলেন, ইসরায়েলের বর্তমান রাফাহ পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন উদ্বেগ শুনতে এবং হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে অভিযানের বিষয়ে বিকল্প একটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটন যাবেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের একটি হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। হামাস উৎখাতের নামে টানা ৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ হামলা-অভিযানে প্রায় ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এ পর্যন্ত, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, দখলদার রাষ্ট্রের সেনাদের টানা হামলায় প্রায় ধ্বংস্তূপে পরিণত গাজা উপত্যকাতে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ১৩ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন রাফাহতে। এবার জনবহুল এ শহরটিতে রাফাহতে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।
একুশে সায়বাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :