বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেবেন মমতা। বুধবার (১৭ এপ্রিল) নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এতে নাগরিকদের বিনামূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস ও পাঁচ কেজি রেশন সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে আর দু’দিন বাকি। আগামী শুক্রবার প্রথম দফায় ভারতের ১০১টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। তার আগে বুধবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তথা কেন্দ্রের বিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র তৃণমূল ভবন থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দলের ১০টি প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন। তবে এটাকে প্রথাগত ‘ইশতেহার’ বলতে চাইছে না তৃণমূল। নির্বাচনী এই ইশতেহারকে বলা হচ্ছে ‘দিদির শপথ’। কেন্দ্রে ‘ইনডিয়া’ জোট সরকার গঠন করলে এসব প্রতিশ্রুতি পালন করা হবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূলের ১০ প্রতিশ্রুতিতে ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে রেশন, পরিবার প্রতি বিনামূল্যে ১০টি সিলিন্ডার সরবরাহ, আবাসনের পাশাপাশি সিএএ, এনআরসি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো আইনের কথাও উঠে এসেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের একাধিক প্রকল্প এবং প্রতিশ্রুতির বিকল্প ঘোষণা করেছে তৃণমূল। এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির পক্ষ থেকে বার বার উঠে এসেছে ‘মোদির গ্যারান্টি’র প্রসঙ্গ। মোদি নিজেও পশ্চিমবঙ্গে এসে এই দুই শব্দবন্ধে জোর দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের ইশতেহারে যা বলা হয়েছে-১. ভারতের সব জব কার্ডধারীদের ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। দেশজুড়ে সব শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি পাবেন।
২. সব দরিদ্র পরিবারের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে। সব পরিবারকে নিরাপদ, পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। ৩. দেশের প্রত্যেক বিপিএল পরিবার বছরে ১০টি করে সিলিন্ডার বিনামূল্যে পাবেন। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব রান্নার প্রক্রিয়া ব্যবহারের অভ্যাস বৃদ্ধি করা হবে। ৪. প্রতি মাসে দেশের প্রত্যেক রেশন গ্রাহককে পাঁচ কেজি রেশন বিনামূল্যে দেওয়া হবে। বিনামূল্যে রেশনের খাদ্যসামগ্রী মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।
৫. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের উন্নতির স্বার্থে তফসিলি জাতি, জনজাতি প্রভৃতি অনগ্রসর জাতির উচ্চশিক্ষার বৃত্তি বাড়ানো হবে। ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের বার্ধক্য ভাতার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হবে। তারা মাসে ১০০০ টাকা করে বার্ষিক ১২ হাজার টাকা পাবেন।
৬. স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দেশের সব কৃষককে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের আইনগত গ্যারান্টি দেওয়া হবে। যা সব ফসলের উৎপাদনের গড় খরচের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি ধার্য করা হবে।
৭. পেট্রল, ডিজেল এবং এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাশ্রয়ী মূল্যে সীমাবদ্ধ করা হবে। এগুলোর দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল (প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) তৈরি করা হবে।
৮. ২৫ বছর পর্যন্ত দেশের সকল স্নাতক এবং ডিপ্লোমা অর্জনকারীর দক্ষতা বাড়াতে এক বছরের শিক্ষানবিশ প্রতিশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শিক্ষানবিশদের অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য মাসিক বৃত্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীরা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাবেন।
৯. বহুল বিতর্কিত সিএএ বিলুপ্ত ও এনআরসি বন্ধ করা হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোথাও প্রয়োগ করা হবে না।
১০. বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক হাজার টাকা এবং এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
১১. সব নারীকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের বদলে উন্নততর স্বাস্থ্যসাথী বিমা চালু করা হবে। যার ফলে ১০ লাখ টাকার বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে।
একুশে সংবাদ/ঢা.পো./এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :